মুরশিদুজ্জামান হিমু:
‘রাজকীয় খেলা ক্রিকেট’- খুব প্রচলিত একটি কথা। একসময় ব্রিটিশদের হাত ধরে এই উপমহাদেশে আসা এই খেলা ব্যপ্তি ছড়াতে সময় নেয়নি খুব একটা। দীর্ঘদিন পর্যন্ত টেস্ট ফর্মেটটাই ছিল সর্বজন সিদ্ধ, পছন্দনীয়। এরপর এলো একদিনের ম্যাচ। শুরুতে ৬০, পরে ৫০ ওভার। ব্যস্ত নাগরিক জীবনে ৫০ ওভারের ম্যাচও অনেকের কাছে হয়ে উঠলো একটু ‘বোরিং’। অনেকের কাছে সময় নষ্টও বটে। এতই যখন তীর্যক সমালোচনা, তখন টি-টোয়েন্টি এনে সমালোচকদের একহাত নেয়া হল। এখন তাতেও হচ্ছে না। আনা হলো টি-টেন। এভাবে ক্রিকেট সংস্করণ ছোট হতে হতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাহলে আদি সংস্করণের কী হবে? টেস্ট ক্রিকেটের প্রদীপ কি তবে নিভতে বসেছে?
এমন প্রশ্ন মাঝেমধ্যেই জোরালো হয়ে সামনে আসে। বিশ্বকাপের পরপরই হঠাৎ পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ আমির টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে বসলেন। কিন্তু ঠিকই তিনি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ চালিয়ে যাবেন। জাতীয় দলে খেলবেন, খেলবেন টি-টোয়েন্টি লিগ। হাত ভরে কামানোর তো ওগুলোই সুযোগ। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তার টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা যখন সমালোচনার তুঙ্গে, তখন পাকিস্তানের আরেক পেসার ওয়াহাব রিয়াজও দিয়ে বসলেন একই ঘোষণা। বিশ্বকাপে তারও যে ফিটনেস এবং বলের ক্ষুরধার দেখা গেছে, অনায়াসে তিনিও খেলতে পারতেন আরও ক’বছর। তবে কি তিনিও স্রোতে গা ভাসালেন?
কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্টও বলেছেন, কয়েকজন ‘কী প্লেয়ার’ নাকি টেস্ট খেলতে চান না। আগ্রহ নেই তাদের। তাহলে টেস্টবিমুখ স্রোতে আছে আমাদের ক্রিকেটাররাও!
আদতেই কি টেস্ট ক্রিকেট হুমকির মুখে? এর উত্তর সাবেক বা ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বেশ ভালভাবেই দেন। তাদের কেউই মানতে চান না এ কথা। উল্টো টেস্টের যথার্থতার পেছনে শক্ত যুক্তিও দেন। যার একটি ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা’। পাঁচ দিনের খেলা হলেও শেষে যে উত্তেজনা থাকে ম্যাচে, সেটিকেই টেস্ট টিকে যাবার অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করেন অনেকে। আজকাল তিন-চার দিনে শেষ হওয়া ম্যাচেও যে টান টান উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে, তা নিশ্চয়ই আমলে নেবেন সমালোচকরা।
আরেকটি বিষয়, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ক’টি ইনিংস মনে রাখার মতো? কম বলে বেশি রান করায় খানিকটা উত্তেজনা থাকে ঠিকই। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় লেখার মতো ইনিংস আসে কালেভদ্রে। সেদিক দিয়ে টেস্ট ক্রিকেট অপ্রতিরোধ্য। এখনই চোখ বুজে ভাবুন। সামনেই ভেসে উঠবে লিজেন্ড ব্রায়ান লারার ৩৭৫ বা ভি ভি এস লক্ষণের ২৮১ রানের অনবদ্য ইনিংস। ব্যাটসম্যানদের বড় বড় ইনিংস অবশ্য একদিনের ম্যাচেও হয়ে থাকে আজকাল।
তাই যতই প্রশ্ন উঠুক, রঙিনের ভিড়ে সাদা পোশাকের আবেদন ফুরাবে না কখনও। হয়ত সময়ের সাথে কিছু জৌলুস কমেছে, কিন্তু রাজকীয় সৌরভ তো এখনও বিলিয়েই যাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট। অ্যাশেজের কথাই ভাবুন একবার।
Leave a reply