বিশ্বের খ্যাতনামা রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার তথা আবাসন ব্যবসায়ী ছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দুই বছর পার হলেও ট্রাম্প তার সেই আগের পেশা ভুলে যাননি। এবার সেটারই প্রমাণ রাখলেন তিনি। জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড কিনে নেয়ার ব্যাপারে তার আগ্রহের কথা। ট্রাম্প তার উপদেষ্টাদের বলেছেন, যদি সম্ভব হয় কানাডার উত্তরপূর্বে প্রায় বরফ ঢাকা দ্বীপটি কিনে নিতে আগ্রহী তিনি। বৃহস্পতিবার এ খবর প্রকাশ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। বলা হয়, প্রেসিডেন্ট এ ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের ব্যাপারে উৎসুক। গ্রিনল্যান্ড কিনে নেয়ার ট্রাম্পের এই খায়েশকে হাস্যকর অভিহিত করে ডেনমার্ক রাজনীতিকরা বলেছেন, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট উন্মাদ হয়ে গিয়েছেন বলেও মন্তব্য তাদের।
গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের একটি স্বশাসিত অঞ্চল। অষ্টাদশ শতকে ডেনমার্ক ৭ লাখ ৭২ হাজার বর্গমাইলের (২ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার) এই দ্বীপটিতে তাদের উপনিবেশ গড়ে তোলে। এখানে প্রায় ৫৭ হাজার লোক বসবাস করে। তাদের বেশির ভাগ স্থানীয় এস্কিমো ইনুইট আদিবাসী।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, গত কয়েক মাসে ট্রাম্প বিভিন্ন অতিথি ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনায় দ্বীপটি কেনা সম্ভব কিনা তা নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। কেউ কেউ প্রায় জনশূন্য কিন্তু বিভিন্ন খনিজ পদার্থে অত্যন্ত সমৃদ্ধ দ্বীপটি কেনার ব্যাপারে তাকে উৎসাহ দিয়েছেন। ট্রাম্পের কয়েকজন উপদেষ্টা বলেছেন, গ্রিনল্যান্ড কিনতে পারলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভালো হতো। তবে অন্যরা বলেছেন, প্রেসিডেন্টের এটি ‘ক্ষণিকের মুগ্ধতা’।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে তার ডেনমার্ক সফরের কথা। ডেনিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গ্রিনল্যান্ড কেনার বিষয়ে কোনো রকম আলাপ-আলোচনা হবে বলে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। গ্রিনল্যান্ডে থুল নামে মার্কিন একটি বিমানঘাঁটি রয়েছে। তবে শুক্রবার এক টুইটার বার্তায় ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লার্স লোক রাসমুসেন বলেছেন, ‘এটা অবশ্যই ট্রাম্পের একটি কৌতুক, নতুবা আষাঢ়ে গল্প।’
এদিকে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে ট্রাম্পকে নিয়ে হাসিঠাট্টার রোল পড়েছে। এমএসএনবিসির জনপ্রিয় উপস্থাপক রেইচেল ম্যাডো টিপ্পনি কেটে বলেছেন, ট্রাম্প নির্ঘাত দ্বীপটিতে একটি গলফ কোর্স বানানোর পরিকল্পনা করছেন। পত্রিকাটি ট্রাম্পের এই অভিলাষকে শিশুসুলভ অভিহিত করে লিখেছে, ট্রাম্প হয়তো জানেন না, দ্বীপটি ডেনমার্ক নামক একটি দেশের অন্তর্গত। তারা গ্রিনল্যান্ড বিক্রিতে আগ্রহী, সে কথাও শোনা যায়নি। ট্রাম্পই প্রথম নন। এর আগে সর্বপ্রথম গ্রিনল্যান্ড কেনার চিন্তার উদয় হয় ৩৩তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের মাথায়। ১৯৪৬ সালে তিনি ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দেন। অন্য দেশের কাছ থেকে বিশাল ভূ-খণ্ড অঞ্চল কেনার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব ইতিহাস আছে। ১৮৬৭ সালে ৭২ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে পাঁচ লাখ ১৮ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটারের ভূ-খণ্ড আলাস্কা কিনে নেয় দেশটি।
অলাভজনক অঞ্চল ভেবে সে সময় আলাস্কাকে আমেরিকার কাছে বেচে দেয় রাশিয়া। কিন্তু তার কিছু কাল পরই আলাস্কাতে আবিষ্কৃত হয় সোনার খনি। রাতারাতি বদলে যায় ওই অঞ্চলের গুরুত্ব। সেই আলাস্কা এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিশাল এক সাফল্য। শুধু সোনার খনির কারণেই নয়, এর মধ্য দিয়ে আর্কটিক ও বেরিং সাগর অঞ্চলে নিজের ক্ষমতাও প্রতিষ্ঠিত করে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, এখনও আলাস্কা হাতছাড়া হওয়ার আফসোস বয়ে বেড়ায় রাশিয়া।
Leave a reply