সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে সাক্ষ্য দেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার। তিনি বলেন, লিয়াকত ফোনে বলেছে, ‘টার্গেট ফেলে দিয়েছি, তোরা তাড়াতাড়ি আয়।’ আরেক ফোনে বলেন, ‘স্যার একটাকে ডাউন করেছি, আরেকটারে ধরে ফেলেছি’। সিনহা পানি ও শ্বাস নিতে চাইলে লিয়াকত গালাগাল করে কোমরে লাথি মেরে ফেলে দেয় ও মাথা চেপে ধরেন।
সোমবার (২৩ আগস্ট) সকাল দশটা থেকে ১নং দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। টানা তিনদিন চলবে এই সাক্ষ্যগ্রহণ। আদালতে হাজির করা হয় ১৫ আসামিকে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, সার্টিফায়েড কপি আসামিদের দেয়া হয়নি, এটি ছাড়া জেরা করতে অপারগতা জানান তিনি। সার্টিফায়েড কপি না পাওয়ায় কোন কোন ধারায় চার্জ হয়েছে তা জানেন না। কপি পেলে পরের দিন জেরা করার কথা আদালতকে জানান রানা দাশগুপ্ত।
এর জবাবে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, সবার সামনে চার্জগঠন করা হয়েছিল তাই সবাই বিষয়গুলো অবগত আছেন। এটি মামলা বিলম্বিত করার প্রবণতা। এরপর আদালত আসামিপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সব নথি আপনাকে দেয়া হবে, এটা ভেজাল করার মানসিকতা। সমস্ত সুযোগ দেয়া হবে, তবুও সময় নষ্ট করা যাবে না। মামলার নথি আসামিপক্ষকে দেয়ার আদেশ দেন আদালত।
এরপর, সাড়ে দশটা থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়, প্রথম সাক্ষ্য দেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার। এসময় আসামিদের সাথে আইনজীবীরা বারবার কথা বলায় সতর্ক করেন আদালত।
সাক্ষ্যে সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার বলেন, লিয়াকত ফোনে বলেছে, ‘টার্গেট ফেলে দিয়েছি, তোরা তাড়াতাড়ি আয়।’ আরেক ফোনে বলেন, ‘স্যার একটাকে ডাউন করেছি, আরেকটারে ধরে ফেলেছি’। সিনহা পানি ও শ্বাস নিতে চাইলে লিয়াকত গালাগাল করে কোমরে লাথি মেরে ফেলে দেয় ও মাথা চেপে ধরেন। এরপর পুলিশ আসলে লিয়াকত নির্দেশ দেয় আশপাশের মানুষকে ভয় দেখাতে, যাতে কেউ সিনহাকে সাহায্য করতে না পারে, ছবি বা ভিডিও করতে না পারে।
তিনি সাক্ষ্যে আরও বলেন, কিছুক্ষণ পর প্রদীপ আসে, কাকে যেন ফোন করে, লিয়াকতের সাথে কথা বলেন, সিনহার দিকে এগিয়ে যান, তার বাম পাঁজরে সজোরে লাথি মারেন। এরপর তিনি জুতা দিয়ে বাম গলা চাপ দেন, তখন সিনহা নাড়াচাড়া করেন ও কাঁপতে থাকেন। একপর্যায়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে প্রদীপ গলা থেকে পা সরিয়ে নেন। এরপর রুবেল সাগরকে বলেন, গাড়ি থেকে ইয়াবা, গাঁজা নিয়ে আসতে হবে। রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার সিনহাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে আসামিরা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দুটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন। লিয়াকত, প্রদীপের প্ররোচনায় ও ফোনে নির্দেশিত হয়ে সিনহাকে গুলি করেন, পরে প্রদীপ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত ও তরান্বিত করেন। আদালতের কাছে চার্জশিটে বর্ণিত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।
আদালতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার, আদালত তাকে শান্ত হয়ে বসতে বলেন। শারমিন শাহরিয়ারের সাক্ষ্য গ্রহণের পর শুরু হয় জেরা, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরায় সিনহা স্বেচ্ছায় না বাধ্যতামূলক অবসরে গিয়েছেন, ইউটিউব চ্যানেলের বিষয়সহ বিভিন্ন প্রশ্ন করেন তাকে।
জেরার সময় আইনজীবীদের প্রশ্নের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আদালত, সতর্কভাবে প্রশ্ন করার আহবান জানান। বাহাদুরি দেখানোর জন্য যেনতেন প্রশ্ন না করার অনুরোধ জানান। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে।
আগামীকাল মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) সকাল ১০টায় আবার মামলার কার্যক্রম শুরু হবে।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, বিচার প্রক্রিয়ায় অনুরাগ-বিরাগের সুযোগ নেই। এক বছরের কম সময়ে বিচারের জন্য প্রস্তুত হয় চাঞ্চল্যকর মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা রাশেদ হত্যা মামলা। ২৭ জুন চার্জগঠন করে ২৬ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ঠিক করা হলেও তা গতি পায়নি করোনা সংক্রমণে।
Leave a reply