এক কথায় অসাধারণ মুশফিকুর রহিম! পুরো ম্যাচে এক মহাকাব্যিক ইনিংস খেলে টি২০ ইতিহাসে অন্যতম রেকর্ড জয় এনে দিয়েছেন দেশকে। শুধু ব্যাটে নয়, মন-মেজাজের অনবদ্য এক শৈলী তৈরি করে তিনি খেলেছেন। ম্যাচ শেষে সব হাততালি তার প্রাপ্য হলে শুরুতে লিটন দাসের টর্নেডো ইনিংস কিছুতেই বাদ দেওয়া যায়।
গতকালের ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দল নিজেদের মাটিতে ফেভারিট থেকেও হেরে গিয়েছিল ত্রি-দেশীয় সিরিজ। হেরেছিল টেস্ট, দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজও। টি২০ সিরিজে বাংলাদেশ দলে ব্যর্থতার মূলে ছিল পাওয়ার প্লের সময় অফ-স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়ের বা-হাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবার ও সৌম্য সরকারের উইকেট বিলিয়ে দেওয়া।
ওপরের সারির ব্যাটসম্যানদের কাবু করতে উইকেটের কিছুটা বাইরে বলার করার কৌশল অনেকদিন ধরেই ব্যবহার করে আসছিল শ্রীলংকা। আগের ম্যাচগুলোর মতো ঠিক একই কৌশল বাংলাদেশ দলের নাড়ি-নক্ষত্র জানা হাথুরুও শনিবারের ম্যাচেও প্রয়োগ করেছিলেন। অন্যান্য ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো বিষয়টি ধরতে পারলেও লংকানদের এই কৌশলকে দুর্দান্ত জবাব দিয়ে পরাস্ত করেছে বাংলাদেশ।
জয়ের জন্য প্রয়োজন ২১৫ রান। জিততে হলে একটা দুর্দান্ত সূচনার কোনো বিকল্প নেই, এটা খুব ভালোভাবে বুঝেছিল টিম বাংলাদেশ। ওপরের সারির ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে হাথুরুর কৌশলকে ধূলিসাৎ করে ম্যাচ জয়ে বিপক্ষ দলকে চমকে দেওয়ার মতো সূচনা করতে ডান-হাতি ব্যাটসম্যান লিটন দাসকে ‘পদোন্নতি’ দিয়ে অভিজ্ঞ তামিম ইকবালের সঙ্গে উদ্বোধন করতে পাঠানো হয়।
বাকিটা ইতিহাস! মাত্র ৪৩ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলতে তিনি খেলেন মাত্র ১৯ বল। ওই ৪৩ রানে দুইটি চার হাকার তিনি। আর ছক্কার মার, পাঁচ পাঁচটি হাকিয়েছেন। এই জায়গায় গত কালের ম্যাচে টিম বাংলাদেশের ‘গার্ডিয়ান গ্যালাক্সি’ পরিণত হওয়া মুশিকেও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। মহাকাব্যিক ইনিংস খেলা মুশি হাকিয়ে ছিলেন চারটি ছয়।
খেলার পর তামিম ইকবাল বলেন, “আমরা জানতাম তারা অফ-স্পিনার দিয়েই শুরু করবে। লিটকে ওপরে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর এটি অন্যতম একটি কারণ। কৌশলটি আমাদের জন্য কাজে দিয়েছিল।”
পাওয়ার প্লে’র ছয় ওভারে দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের বেধড়ক পিটুনিতে ৭৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। এ সময় শুধু লিটন দাস আউট হয়েছিলেন। অমন একটা ভিত্তি মধ্যবর্তী ওভারগুলোতে ক্রিকেটীয় কাণ্ডজ্ঞানে বেশ ভালোভাবে কাজে লাগিয়ে ছিলেন মুশফিক, এবং কিছু সময়ের জন্য মাহমুদুল্লাহ। শুরুর ভিত্তি এবং মাঝে ম্যাচের ভার অনুসারে রান তোলার ভরবেগ পথ না হারিয়ে পুরোপুরি বিকশিত হয়ে বাংলাদেশ দলকে অনন্য সাধারণ এক জয় এনে দেয়।
তামিম বলেন, “২১৫ খুবই বড় সংগ্রহ। আমার মনে হয়েছিল, যদি সবাই বিশ্বাস করে যে প্রথম ছয় ওভার ভালো খেলতে পারলে এবং মাঝের ওভার গুলোতে স্মার্ট ব্যাটিং করলে যে কোনো কিছু ঘটতে পারে। এটাই ছিল ভাবনায়, এবং সেটা কাজে দিয়েছে। প্রথম ছয় ওভার আমি ও লিটন চমৎকার ব্যাটিং করেছি, এবং এরপর মুশি ও রিয়াদ মাঝের ওভারগুলোর ব্যাটিং ছিল অসাধারণ। আমাদের প্রথম সারির ছয় ব্যাটসম্যান এদিন কঠিন পরিশ্রম করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “এই আমাদের জন্য অনেক বড় কিছু, বিশেষত দুই শতাধিক রান তাড়া করা। আগের কখনও এত রান তাড়া করে জিতিনি, এবং এই জয় থেকে আমরা আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। এখন আমরা বিগত কয়েক মাসের ব্যর্থতার ঘেরাটোপ থেকে ফেরার আশা করতে পারি।”
অফ-স্পিনার দিয়ে ইনিংস শুরু করানোটা শ্রীলংকার একটা ভুল কৌশল মনে পারে। কিন্তু অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমাল ভেবেছিলেন, প্রতিপক্ষের কয়েকটি উইকেট দ্রুত তুলে নেওয়াটাই এই ব্যাটিং-বান্ধব উইকেটে সবচেয়ে ভালো কৌশল।
ম্যাচ শেষে চান্ডিমাল বলেন, “রান তাড়া করার সময় কোনো প্রতিপক্ষকে আটকে রাখতে হলে ইনিংসে শুরুতেই কয়েকটি উইকেট দরকার। ঠিক সেটাই আমরা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি। বোলিংয়ের শুরুতেই আমরা দ্রুত উইকেট ফেলতে পারেনি, এবং এতেই ম্যাচটি আমাদের হাত ছাড়া হয়ে যায়। সবশেষে, এটি খুবই ভালো ব্যাটিং উইকেট।”
তিনি আরও বলেন, “আপনি বলতে পারেন না, ধনঞ্জয়কে বোলিং করানো ভুল ছিল। হ্যাঁ, আজকে এই কৌশল কাজ করেনি। কিন্তু সে আমাদের প্রধান স্পিনার, এবং প্রতিপক্ষের উইকেট নিতে আমাদের প্রধান নির্ভরতা। এ জন্যই তাকে বল করতে দিয়েছিলাম, বিশেষত পাওয়ার প্লেতে। আমরা যদি কয়েকটি উইকেট পেতাম তবে খেলার ফলাফল অন্যরকম হত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা হয়নি।”
যমুনা অনলাইন: এফএইচ
Leave a reply