বিশ্বকাপ ক্রিকেটের যে কোনো ফরম্যাটে এই প্রথম ভারতের বিপক্ষে জয়, সেটিও আবার ১০ উইকেটের সর্বোচ্চ ব্যবধানে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে প্রথম এই জয়কে বিশেষ করে রাখলো পাকিস্তান। দুর্দান্ত বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ভারতকে ১৫১ রানে আটকে রাখার পর দুই পাক ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজমের রেকর্ড গড়া অবিচ্ছিন্ন উদ্বোধনী জুটিতেই উঠে আসে ১৫২ রান। ৬ চার ও ২ ছয়ে ৫২ বলে ৬৮ রানে অপরাজিত ছিলেন বাবর। তার পার্টনার রিজওয়ান ছিলেন আরও আক্রমণাত্মক। ৬ চার ও ৩ ছয়ে ৫৫ বলে করেছেন ৭৯।
স্কোরবোর্ডে ১৫১ রানকে ডিফেন্ড করার জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল শুরুতেই উইকেট ফেলা। কিন্তু রিজওয়ান ও বাবর এই মহারণে তাদের চমৎকার ফর্মকে টেনে এনেছেন। জাসপ্রিত বুমরা ও বরুণ চক্রবর্তীকে দেখেশুনে খেললেও আক্রমণ করার জন্য এই দুই ওপেনার বেছে নিয়েছেন মোহাম্মদ শামি ও ভুবনেশ্বর কুমারকে। প্রথমদিকে আক্রমণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন রিজওয়ান। অন্যদিকে স্ট্রাইক রোটেট করে খেলছিলেন টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের সেরা ব্যাটার বাবর আজম। কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্রিজে ধাতস্থ হয়ে যাওয়ার পর বাবরও খেলছেন একই ছন্দে।
ভারত এই ম্যাচ হারায় ভিরাট কোহলির অধিনায়কত্ব নিয়ে যে অনেক কাটাছেড়া হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অফ ফর্মে থাকা ভুবনেশ্বর কুমারকে ইনফর্ম শার্দুল ঠাকুর পরিবর্তে খেলানোর সিদ্ধান্তের সাথে আলোচনায় আসবে দলের সেরা পেসারকে পাওয়ার প্লেতে কেবল এক ওভার করানো। ১০ ওভার শেষে পাকিস্তান সংগ্রহ করে বিনা উইকেটে ৭১, যেখানে এই পরিস্থিতিতে ভারতের ছিল ৩ উইকেটে মাত্র ৬০ রান। অর্থাৎ দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে কোহলির অ্যাটাক প্ল্যান।
বোলার এবং ফিল্ডারদের দুর্দান্ত পারফরমেন্সে ভারতকে ১৫১ রানের বেশি করতে দেয়নি পাকিস্তান। পাওয়ার প্লের মধ্যেই ভারতীয় তিন টপ অর্ডার ব্যাটারকে ফিরিয়ে দিয়ে প্রথমেই ম্যাচের চালকের আসনে চলে যায় পাকিস্তান। ভিরাট কোহলির ব্যাটে অবশেষে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছে শিরোপা প্রত্যাশী ভারত।
দলের অন্যতম সেরা ব্যাটার রোহিত শর্মাকে প্রথম ওভারেই হারিয়ে ফেলার পর শাহিন আফ্রিদির দ্বিতীয় শিকার হয়ে ইনফর্ম লোকেশ রাহুলও ফিরে গেলে প্রাথমিক যে ধাক্কা খায় ভারত, তাতেই রানের গতি হয়ে পড়ে মন্থর। মর্যাদার লড়াইয়ে একবার পিছিয়ে গেলে ফিরে আসা হয়ে পড়ে দুষ্কর। তাই রানের গতি বাড়াবেন, নেমেই চার ও ছয়ে তেমন ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন সূর্যকুমার যাদব। কিন্তু হাসান আলির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে এই হার্ড হিটারও ফিরে গেলে বড়সড় বিপর্যয়ের সামনেই পড়ে ভারত।
কোহলির সাথে জুটি গড়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা চালিয়েছেন রিশাভ পান্ত। উইকেটে যতক্ষণ ছিলেন, লড়াই করে গেছেন। আন-অর্থোডক্স শট খেলে ২ চার ও ২ ছয়ে ৩০ বলে ৩৯ রান করে শাদাব খানের বলে ফিরে গেছেন তিনি। তারপর রবীন্দ্র জাদেজা আর হার্দিক পান্ডিয়া নেমেও আধিপত্য বিস্তার করতে পারেননি পাকিস্তানি বোলারদের বিরুদ্ধে। শাহিন আফ্রিদি ফিরে এসে ১৯-তম ওভারে ফিরিয়ে দিয়েছেন ভিরাট কোহলিকেও। ৫ চার ও ১ ছয়ের সাহায্যে ৪৯ বলে ৫৭ রানের ক্যাপ্টেনস নকটিই ছিল ভারতীয় ইনিংসের হাইলাইটস।
পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে সফলতম হলেন প্রথমেই ভারতীয় দূর্গে আঘাত হানা শহিদ আফ্রিদি। ৩১ রান খরচায় তিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট। ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি। এছাড়া মিতব্যয়ী বোলিংয়ে ভারতকে রানের পাহাড় গড়তে দেননি শাদাব খান ও হারিস রউফ।
Leave a reply