নাসিরনগরের ১৩ আসনের মধ্যে ৭ আসনেই ডুবলো নৌকা; নেপথ্যে?

|

স্থানীয় প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া:

১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে পরাজয় সাতটিতেই। তাও আবার দলের শক্তিশালী দুর্গ হিসেবে পরিচিত নাসিরনগরে! এমনকি কেন্দ্রীয় নেতাদের এলাকাগুলোতেও হারের মুখ দেখেছে আওয়ামী লীগের ইউপি প্রার্থীরা। তাদের এমন ফলাফলকে কার্যত ভরাডুবি হিসেবে ধরে নিয়েই চলছে নানান আলোচনা ও সমালোচনা। তবে দলের দায়িত্বশীল কেউ এই ব্যাপারে এখনও মুখ খোলেননি।

প্রসঙ্গত, নাসিরনগরে ১৩ ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার। ফল ঘোষণাও হয় ঐদিন রাতে। এরপর জানা যায়, চাতলপাড় ইউনিয়নে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুল আহাদ। অথচ এই ইউনিয়নে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ করিমের বাড়ি। অবশ্য ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পক্ষে কোনো প্রচারণায় তাকে দেখা যায়নি। উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন-প্রত্যাশী এম.এ করিম।

একই চিত্র বুড়িশ্বর ইউনিয়নে। সেখানে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত এটিএম মোজ্জামেল হক সরকার। এলাকাটি কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগ নেত্রী ও নাসিরনগর থেকে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন-প্রত্যাশী এম.বি কানিজের নিজ এলাকাও বটে। কিন্তু তাকেও ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর হয়ে প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি। ভোটের দিন অবশ্য নৌকায় ভোট দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেন।

গোর্কণ ইউনিয়নে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছোয়াব মোহাম্মদ হৃদল। এই ইউনিয়নও বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সৈয়দ এহসানের বাড়ি। তাকেও ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী প্রার্থীর পক্ষে কোনো গণসংযোগে দেখা যায়নি।

নাসিরনগর সদর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন উপজেলা কৃষকলীগের সাময়িক বহিষ্কৃত আহ্বায়ক শেখ আবদুল আহাদ। তিনি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক ও নাসিরনগরে আ.লীগের মনোনয়ন-প্রত্যাশী মোহাম্মদ নাজির মিয়ার ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত শেখ আবদুল আহাদ। কিন্তু নাজির মিয়াকেও দেখা যায়নি আবদুল আহাদের প্রচারণায়। ভোটের দিন তিনি তার নিজের ভোটপ্রদান শেষে তার বাড়ি বিজয়নগরের ইসলামপুর গ্রামে চলে যান।

এদিকে প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদ এ্যাড. ছায়েদুল হকের জন্মস্থান পূর্বভাগ। সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আক্তার মিয়া পেয়েছেন জয়। কিন্তু তার নির্বাচনপূর্ব প্রচারণাতেও দেখা যায়নি ছায়েদুল হকের স্ত্রী দিলশাদ আরা মিনুকে।

নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত হয়েছেন উপজেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাহার চৌধুরী, গেয়ালনগর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি কিরন মিয়া, কুন্ডা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াজ উদ্দিন। এছাড়া নৌকা না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে জয়ী হয়েছেন হরিপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মো. ফারুক মিয়া। এদিকে কুন্ডা ও হরিপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর অবস্থান ছিল তৃতীয়।

এমন হতাশাজনক ফলাফলের পর দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কারণকেই এর জন্য দায়ী করছেন। যার মধ্যে আছে- সাংগঠনিক দুর্বলতা, র্দীঘদিন নাসিরনগর উপজেলা ও ইউনিয়ন আ.লীগের সম্মেলন না হওয়া, মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামতকে প্রধান্য না দেওয়া, দুর্বল প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া, নৌকা-প্রতীক পাওয়া প্রার্থীদের সাথে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সমন্বয় না হওয়া, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এক যোগে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা না করা, স্থানীয় সাংসদ বি.এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রামকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা ইত্যাদি। নাসিরনগর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি রাফি উদ্দিন জানান, এইসব বিষয়ে দলীয় সভায় আলোচনা হবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply