লক্ষ্মীপুরে গোপনে সরকারি বই বিক্রির চেষ্টা প্রধান শিক্ষকের, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থার আশ্বাস

|

জব্দকৃত পিকআপ ও উদ্ধারকৃত বই।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

লক্ষ্মীপুরে ২৫ মণ সরকারি বই বিক্রির সময় একটি মালবাহী পিকআপ ভ্যান আটক করেছে পুলিশ। ৯৯৯ এ সংবাদ পেয়ে রায়পুর উপজেলার মিরগঞ্জ এলাকা থেকে ওই পিকআপ ভ্যানটি আটক করা হয়।

বুধবার (১২ জানুয়ারি) বুধবার দুপুরে স্থানীয় মিরগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুত্তাওহীদ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ের পরীক্ষার খাতা ও কার্টুনের সাথে গোপনে ওই বইগুলো বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক জানান, গত ২৮ বছর আগে ১৯৯৪ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে শামছুত্তাওহীদ বিদ্যালয়ের বিদ্যমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ দেখিয়ে বছর বছর দ্বিগুণ বই উত্তোলন করে আসছেন। শিক্ষার্থীদের মাঝে অর্ধেক বই বিতরণ করে বাকি বই গোপনে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করতেন তিনি।

তারা জানান, বুধবার দুপুরে বিরতির সময় বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুল হাদি ২০ বস্তা বই পিকআপ গাড়িতে তোলেন। এ সময় তার কাছে বই কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি উত্তর দেন, হেডস্যার জানেন। তিনি বইয়ের বস্তাগুলো গাড়িতে তুলে দিচ্ছিলেন।

সরকারী বই গোপনে বিক্রি করার সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে মুহুর্তের মধ্যে আশপাশের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী এসে পিকআপ ভ্যানটি আটক করে। এ সময় এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তখন ৯৯৯ এ ফোন করলে রায়পুর থানা পুলিশ এসে বইসহ পিকআপ ভ্যানটি আটক করে।

খবর পেয়ে রায়পুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম সাইফুল হক ও রায়পুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের চার্জে থাকা সহকারি কমিশনার (ভূমি) রাসেল ইকবাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিষয়টি আইনসম্মতভাবে সুরাহা করার আশ্বাস দিয়ে উপস্থিত উত্তেজিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী অভিভাবক ও এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক স্কুলের বিভিন্ন খাতে আসা বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। বিদ্যালয়ের জিনিসপত্র যখন যা হাতের কাছে পান সেটিই বিক্রি করে টাকা নিজের পকেটে নেন তিনি। শিক্ষক-কর্মচারীসহ এলাকাবাসী তার এসব দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে তিনি রাজনৈতিক প্রভাবের ভয় দেখান।অভিযোগকারীর মতে, আনুমানিক ২৫ মণ বই বিক্রি করে প্রায় ২০ হাজার টাকা হাতিয়েছেন এ প্রধান শিক্ষক।

গোপনে বই বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুত্তাওহীদ জানান, বই বিক্রির বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। মৌখিক অনুমতি নিয়েই বই বিক্রি করেছি। অন্য অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। একটি চক্র আমাকে হয়রানি করতে চায়।

এ বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে রায়পুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম সাইফুল হককে মুঠো ফোনে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সুরাহা হয়ে গেছে। প্রধান শিক্ষককে বই বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক বিনা অনুমতিতে, বিনা নিলামে সরকারি বই বিক্রি করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে অন্য কাজের ব্যস্ততার অজুহাত দেখান।

এদিকে, অবন্টিত এসব বই বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি নিয়মে বই বিক্রি করা নিষিদ্ধ। কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের পর বই অবশিষ্ট থাকলে প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে বইয়ের সংখ্যা জানাবেন। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা যথাযথ মাধ্যমে শিক্ষা অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দেবেন। অধিদপ্তর বিক্রির অনুমতি দিলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে নিলাম কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটি উন্মুক্ত নিলামে প্রতিযোগিতামূলক দরে বই বিক্রি করতে পারবেন। সে টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। প্রধান শিক্ষক কোনোভাবেই নিজে বই বিক্রি করতে পারবেন না, সেটি গোপনে হোক বা প্রকাশ্যে। অভিযোগ প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল মতিন বলেন, প্রধান শিক্ষকের সরকারিবই বিক্রির অনুমোদন নেই। বিষয়টি সম্পর্কে রায়পুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একটু আগে আমাকে জানিয়েছেন। আগামীকাল একজন অফিসার পাঠিয়ে বিষয়টি তদন্ত করা হবে বলে জানান তিনি।


/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply