ঘরে-বাইরে নজিরবিহীন চাপের মুখে পুতিন, এই কি তার বিদায়ঘণ্টা?

|

ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালানোর পর ঘরে-বাইরে নজিরবিহীন চাপের মুখে পড়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একদিকে পশ্চিমাদের নানা নিষেধাজ্ঞায় বড় ধরনের সংকটে রুশ অর্থনীতি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অনেকটাই একঘরে হওয়ার পথে রাশিয়া। সবমিলিয়ে নিজ দেশেই চাপের মুখে পড়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেন থেকেই পুতিনের বিদায়ঘণ্টা বাজলো কিনা, এমন প্রশ্নও উঠেছে।

ঐতিহাসিক শহর সেন্ট পিটার্সবার্গ প্রকম্পিত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে চলা আন্দোলনে। ধরপাকড় কিংবা লাঠিচার্জ কোনো কিছুই নিবৃত্ত করতে পারেনি আন্দোলনকারীদের।

ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালানোর পর থেকেই নিজ দেশে এমন বিরোধের মুখে পড়েছেন পুতিন। কেবল সাধারণ মানুষ নয়, তারকা এমনকি প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও প্রতিবাদে সরব। অথচ কিছুদিন আগেও স্ট্রংম্যান ইমেজের পুতিনের এমন বিরুদ্ধচারণ ছিলো কল্পনাতীত।

নিজ দেশেই এতটা বিরোধিতার মুখে পড়বেন, এটা হয়তো নিজেও ভাবেননি পুতিন। স্পোর্টস তারকা, চলচ্চিত্র সেলেব্রেটি, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়রাও যোগ দিয়েছেন এই প্রতিবাদে। তারা প্রকাশ্যে সমালোচনা করছেন পুতিনের। যা আগে কখনো হয়নি। এই পুরো বিষয়টাই পুতিনের ‘স্ট্রং ম্যান’ ইমেজকে ভেঙে দিয়েছে বলে মনে করছেন চ্যাথাম হাউজের গবেষক জেমস নিক্সেই।

গত দুই দশকে রাশিয়ার অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠেছিলেন পুতিন। সোভিয়েত পরবর্তী নাজুক হয়ে পড়া মস্কোকে সমীহজাগানিয়া শক্তিতে পরিণত করার কৃতিত্বও দেয়া হয় তাকে। তবে ইউক্রেনে হামলার পর দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রুশ অর্থনীতি। প্রতিদিনই বাড়ছে নিষেধাজ্ঞা আর অবরোধের তালিকা। কূটনৈতিকভাবেও পশ্চিমা বিশ্ব থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে দেশটি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ইউক্রেনে অভিযান চালিয়ে ভুল করলেন কিনা পুতিন?

সিআইএসের ইউক্রেন বিষয়ক প্রধান ইভান স্করিকভ বলছেন, এই সংঘাতময় পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। গেল ৮ বছর ধরে ইউক্রেনকে অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ সরবরাহ করে আসছে পশ্চিমা শক্তি। এখানে ইউক্রেনকে ব্যবহার করে লড়াইটা চলছে রাশিয়া এবং পশ্চিমা শক্তির মধ্যে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সংঘাত যতো দীর্ঘমেয়াদি হবে ততোই বিপদ বাড়বে পুতিনের। অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের অসন্তোষ বাড়বে। চ্যাথাম হাউজের গবেষক জেমস নিক্সেই বলেন, উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা থেকেই ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে দিয়েছেন পুতিন। পশ্চিমা বিশ্ব এভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে মস্কোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, সেটাও হয়তো বিবেচনা করেননি। অভিযান শুরুর পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে কিয়েভ দখলের প্রস্তুতি ছিল পুতিনের। অথচ এখন তাকে দীর্ঘ যুদ্ধের মোকাবেলা করতে হবে যা তার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে দীর্ঘদিন যুদ্ধের খরচ বহন করা সহজ হবে না।

এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে কীভাবে ঘরে দাঁড়াবেন পুতিন, তা নিয়ে অবশ্য সতর্ক বিশ্লেষকরা। কারণ খ্যাপাটে চরিত্রের পুতিন এতো সহজে যে মাথা নত করবেন না সেটা নিশ্চিত। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তিনি কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply