জাভির পরিকল্পনার কাছে পাত্তাই পেলেন না আনচেলত্তি

|

এল ক্ল্যাসিকোতে জাভির কাছে এরকম ম্লান হয়েই ছিলেন আনচেলত্তি। ছবি: সংগৃহীত

জাভি হার্নান্দেসের পরিকল্পনার কাছে পাত্তাই পেলেন না আনচেলত্তি। ৩ বছর পর সান্তিয়াগো বার্নাব্যু থেকে প্রতাপশালী জয় নিয়ে ফিরেছে বার্সেলোনা। মাস দুয়েক আগেও ইউরোপে ধুঁকতে কাতালানরা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে বার্নাব্যুতে উড়িয়ে দিয়ে যেন ফিরে আসার বার্তাই জানিয়ে দিলো। আর বার্সাসুলভ পাসিং ফুটবলের সাথে জোরদার প্রেসিংয়ের সমন্বয় করে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী কোচ কার্লো আনচেলত্তির প্ল্যান বি’র অভাবকেই তুলে ধরলেন প্রকটভাবে।

দুই দলের মহারণের সবশেষ ৬ ম্যাচে জয় ছিল না বার্সেলোনার। এমনকি শেষ ৫ এল ক্ল্যাসিকোতে হারই সঙ্গী হয়েছে কাতালানদের। বিবর্ণ বার্সাকে আবারও পুরনো রূপে ফিরিয়ে আনতে তাই একটু বেশি চাপ ছিল জাভির উপর। বিপরীতে ফর্মের তুঙ্গে থাকা রিয়াল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। সাথে ছিল ঘরের মাঠের বাড়তি সুবিধা। গ্যালারি ভর্তি দর্শকদের সমর্থনে উজ্জীবিত লস ব্লাঙ্কোসরা শুরুতেই দুবার প্রতিপক্ষের রক্ষণে হানা দেয়। প্রথমে রদ্রিগো আর মিনিট দুয়েক পর ভিনিসিয়াসের ব্যাক পাস থেকে ভালভার্দের শট গোলরক্ষক টার স্টেগান ফেরালে হাফ ছেড়ে বাঁচে সফরকারীরা।

এরপরই নিজেদের ধাঁচে ফিরে যায় বার্সা। গোটা ম্যাচে ৬০ ভাগ সময় বল দখলে রেখে নিজেদের চিরাচরিত টিকিটাকা ফুটবল শুরু করে কাতালানরা। যার ফল প্রথমার্ধেই পায় তারা। ২৯ মিনিটে ডেম্বেলের ক্রস থেকে মাথা ছুঁইয়ে দলকে এগিয়ে দিয়ে স্বাগতিক দর্শকদের স্তব্ধ করে দেন এ মৌসুমেই আর্সেনাল ছেড়ে আসা স্ট্রাইকার পিয়েরে এমেরিক অবামেয়াং। ৩৬ মিনিটে ম্যাচে ফেরার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন ভিনিসিয়াস। বক্সের ভেতর স্টেগানকে একা পেয়েও বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি তিনি। পরে ভিএআর থেকে পেনাল্টিচেক করা হলেও তাতেও সফল হয়নি স্বাগতিকরা। উল্টো ৩৮ মিনিটে স্কোর লাইন ২-০ করে ফেলে বার্সেলোনা। এবারও অ্যাসিস্ট করেন ডেম্বেলে। তার কর্নার থেকে হেড করে এবার স্কোর শিটে নাম তোলেন এই ম্যাচে রাইট ব্যাক হিসেবে খেলা উরুগুইয়ান ডিফেন্ডার রোনাল্ড আরাউহো।

সাম্প্রতিক সময়ে অনেক ম্যাচেই দেখা গেছে পিছিয়ে পড়েও দারুণভাবে ফিরে এসেছে আনচেলত্তির দল। কিন্তু বিরতির পর নিজেদের আক্রমণের ধার আরও বাড়ায় বার্সেলোনা। দ্বিতীয়ার্ধের ১৭ সেকেন্ডের মধ্যে থিবো কর্তোয়াকে একা পেয়ে বল পোস্টে রাখতে পারেননি ফেরান তোরেস। কিন্তু পরের মিনিটেই ডেম্বেলে-ডি ইয়ং-অবামেয়াংয়ের পা ঘুড়ে ফাঁকায় বল পেয়ে যান তোরেস। এবার আর কোর্তোয়াকে ফাকি দিতে ভুল হয়নি এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডের। নিজেদের মাঠে ২০১৫ সালের পর আবারও বিধ্বস্ত হওয়া তখন অনেকটাই নিশ্চিত।

একের পর এক আক্রমণে রিয়ালের রক্ষণ যখন ভেঙে পড়ছে ঠিক তখনই আবারও বল জালে জড়ায় বার্সেলোনা। থ্রু বল থেকে অফসাইড ভেঙে এবার অবামেয়াংকে বল বানিয়ে দেন তোরেস। নিজের ২য় আর দলের ৪র্থ গোলটি করে গোটা সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে পিনপতন নীরবতা এনে দেন গ্যাবনিজ স্ট্রাইকার অবামেয়াং। ম্যাচে বার্সেলোনা এর থেকে বড় ব্যবধানে জয় পেলেও অবাক হবার কিছু থাকতো না। ডেম্বেলে-তোরেসরা বেশ কিছু সহজ সুযোগ নষ্ট করায় ৪ গোলের জয় নিয়ে মাঠে ফিরতে হয় জাভিকে।

এই ম্যাচে ছিলেন না দুর্দান্ত ফর্মে থাকা করিম বেনজেমা। কিন্তু নিজেদের প্রধান ফরোয়ার্ডকে হারিয়ে আনচেলত্তি তার চিরাচরিত ট্যাকটিক্স থেকে সরে এসে ৪ মিডফিল্ডার ও ২ ফরোয়ার্ড দিয়ে দল সাজান। লুকা মড্রিচকে সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলানোর কৌশলে মাঝমাঠে বাড়তি জায়গা পান পেদ্রি-বুস্কেটস-ডি ইয়ং। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আবার কৌশল পাল্টান। দুই লাইনের মাঝখানে লম্বা ব্যবধান রাখেন তিনি। ৪র্থ গোলের পর আনচেলত্তি আবারও কৌশল পাল্টান। টনি ক্রুস, রদ্রিগোকে উঠিয়ে নিয়ে কামাভিঙ্গা ও লুকাস ভাসকেজকে মাঠে নামানোও কাজে লাগেনি। উল্টো ততক্ষণে যে হাঁপিয়ে উঠেছে মাদ্রিদের আক্রমণ ও মধ্যভাগ, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ক্যাসেমিরো, ভালভার্দেদের মুখভঙ্গিতে।

অন্যদিকে, জাভির করা সবগুলো খেলোয়াড় পরিবর্তনই ছিল কার্যকর। কাতালান খেলোয়াড়রা নিজেদের দায়িত্বও খুব ভালোভাবে জানতে বলেই প্রতীয়মান হয়েছে খেলায়। সার্জিনো ডেস্টের জায়গায় সেন্ট্রাল ব্যাক থেকে রাইট ব্যাকের জায়গায় ভিনিসিয়াসকে বোতলবন্দি করে রেখেছিলেন আরাউহো। লুকা মড্রিচকে জায়গা ছাড়েননি পেদ্রি। ক্যাসেমিরো ছিলেন ডি ইয়ংয়ের ছায়ায়। মূলত, নবাগত কোচ জাভির কৌশলের কাছেই পাত্তা পাননি অভিজ্ঞ কার্লো আনচেলত্তি।

২৮ ম্যাচ শেষে ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তিনে উঠে এসেছে জাভির দল। এক ম্যাচ বেশি খেলা রিয়াল মাদ্রিদ ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে টেবিলের শীর্ষে। ম্যাচ শেষে কারভালিয়ো বলেছেন, লিগ শিরোপা জিতলেও এই ম্যাচটি কখনও হারতে চায় না কোনো পক্ষই। যোগ্য দল হিসেবেই আধিপত্য করে গেল বার্সেলোনা।

এম ই/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply