বিশ্বকাপ মানেই প্রিয় দলের খেলা ও খেলোয়াড়দের নিয়ে তুমুল আলোচনা। এরই মধ্যে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছে ব্রাজিলসহ বেশ কয়েকটি বড় দল। আরেক জায়ান্ট আর্জেন্টিনা প্রাথমিক দল ঘোষণা করলে চূড়ান্ত দল নিয়ে হিসেবনিকেশের জটে পড়ে গেছেন কোচ হোসে সাম্পাওলি। প্রস্তুতি ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে বড় ধরনের ধাক্কা খাওয়ার পর আবার নতুন করে মিলাতে হচ্ছে অনেক হিসেব। এত হিসেবের ভিড়ে দলে থাকার সকল যোগ্যতা থাকার পরও আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ একাদশে অনিশ্চিত বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলার। জেনে নেয়া যাক তাদের কথা।
মাউরো ইকার্দি
সিরি-আ’তে ইন্টার মিলানের অধিনায়কত্ব করছেন মাউরো ইকার্দি। ২৪ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ড বেশ কিছুদিন ধরেই ধারাবাহিকভাবে গোল করে যাচ্ছেন। প্রতিপক্ষের রক্ষণে ত্রাসের সঞ্চার করছেন। ইতালিয়ান লিগে ফর্মের তুঙ্গে থাকার পরও বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার একাদশে জায়গা নাও হতে পারে মাউরো ইকার্দির। অন্তত, এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি তাই বলছে। যদিও বিশ্বকাপের ৩৫ সদস্যের প্রাথমিক দলে আছে ইকার্দির নাম। আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে রয়েছে এক ঝাঁক তারকা খেলোয়াড়। তাদের মধ্যে মেসির সাথে কোচ হোসে সাম্পাওলির পছন্দ হিসেবে আগুয়েরো-হিগুয়েনদের নামই বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। এরই মধ্যে সাম্পাওলি বলেছেন, ইকার্দি খুব ভালো খেলোয়াড় হলেও আর্জেন্টিনার ফরম্যাটের সাথে তার খাপ খাইয়ে নেয়াটা কঠিন হবে। তার খেলার ধরন আর দলের গেম পরিকল্পনায় যথেষ্ট পার্থক্য আছে বলেই মনে করেন সাম্পাওলি।
গত বিশ্বকাপেও সম্ভাবনা জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত খেলা হয়নি ইকার্দির। এরপর কোপা আমেরিকার দলেও জায়গা হয়নি ইকার্দির। গুঞ্জন উঠেছিল ইকার্দিকে বাদ দেওয়ার পেছনে ছিলেন লিওনেল মেসি! ইকার্দির সাথে আরেক আর্জেন্টাইন ফুটবলার ম্যাক্সি লোপেজের সাবেক স্ত্রীর বিয়ে হয়। সংসার ভাঙার জন্য ইকার্দিকে দায়ি করেন লোপেজ। মেসি আর লোপেজের ভালো বন্ধুত্ব। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়েই এ গুঞ্জন। অবশ্য, আর্জেন্টিনার তৎকালীন কোচ বাউজা বলেছিলেন, মাঠের বাইরের কোনো কারণে কাউকে বাদ দেয়া হয়নি। ইকার্দিকে শীঘ্রই ডাকা হবে। পরে ডাকও পেয়েছিলেন, কিন্তু হতে পারেননি নিয়মিত।
ইকার্দি ছাড়াও রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত আর্জেন্টিনার প্রাথমিক দলের আক্রমণভাগে আছেন লিওনেল মেসি, সার্জিও আগুয়েরো, গঞ্জালো হিগুয়েন, পাওলো দিবালা, ডিয়েগো পেরোত্তি, ক্রিস্টিয়ান পাভোন, লাউতারো মার্টিনেজ। ক্লাব পরফরম্যান্স বিচার করলে মূল একাদশের ঠাঁয় পাওয়ার দাবিদার ইকার্দি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোচ সাম্পাওলির রণকৌশলের ওপরই নির্ভর করছে ইকার্দির একাদশে থাকা না থাকা। অথচ, এই ইকার্দিই কিনা আর্জেন্টিনার প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ইতালির হয়ে খেলার প্রস্তাব।
পাওলো দিবালা
সময়ের আলোচিত আরেক আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার পাওলো দিবালা। যাকে ভাবা হয় আর্জেন্টিনার ভবিষ্যত। সিরি-আ’তেই য়্যুভেন্টাসের হয়ে মাঠ কাঁপাচ্ছেন ২৪ বছর বয়সী এ তরুণ। ঝামেলা লেগেছে অন্য জায়গায়। দিবালা খেলেন লিওনেল মেসির পজিশনেই। ফলে, মেসি থাকতে দলে এক প্রকার ব্রাত্যই হয়ে থাকতে হচ্ছে হালের সেনসেশনকে। প্রস্তুতি ম্যাচেও দিবালাকে সুযোগ দেননি কোচ হোসে সাম্পাওলি। মেসিবিহীন ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে ৬-১ গোলে হারার পর তোপের মুখে পড়তে হয় কোচকে। দাবি ওঠে দিবালাকে দলে নেয়ার। এখন পর্যন্ত প্রাথমিক দলে ঠাঁয় পেলেও শেষ পর্যন্ত আগুয়েরো হিগুয়েনদের ভিড়ে মূল একাদশে দিবালার জায়গা হবে কিনা সেটি অনেকটাই অনিশ্চিত।
এর মধ্যে শোনা যাচ্ছে, রণকৌশল বদলে উপরে উঠিয়ে এনে আক্রমণভাগের বাম পাশে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াকেও খেলাতে পারেন সাম্পাওলি। সেক্ষেত্রে দিবালার জায়গা কোথায়?
অবশ্য, অার্জেন্টিনার কয়েকটি গণমাধ্যম বলছে, মেসি কোনো কারণে ইনজুরিতে পড়লে দিবালাকে প্রয়োজন পড়বে, তাছাড়া ভিন্ন রণকৌশলে মেসির পাশেও খেলানো যেতে পারে দিবালাকে। তাদের মতে, দিবালাকে মূল একাদশে দেখা যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।
ম্যানুয়েল লানজিনি
ইংলিশ লিগে ওয়েস্ট হ্যামের হয়ে মাঝমাঠে স্ফূলিঙ্গ ছড়িয়ে চলেছেন ম্যানুয়েল লানজিনি। এই মৌসুম বাজে ভাবে শুরু করা ওয়েস্ট হ্যাম রেলিগেশনের মুখে পড়ে যায়। লানজিনির দারুণ পারফরম্যান্সের কারণেই শেষ পর্যন্ত রেলিগেশন টপকাতে সমর্থ হয় ওয়েস্ট হ্যাম। মাঝ মাঠে বল নিয়ন্ত্রণ, প্রতিপক্ষের রক্ষণদুর্গ ভেদ করায় দারুণ দক্ষ এই মিডফিল্ডার। ডিফেন্স চেরা পাসে স্ট্রাইকারদের দিয়ে দুর্দান্ত সব গোল করিয়ে এরই মধ্যে আলোচনায় এসেছেন লানজিনি। প্রতিপক্ষের জালে বল ঢোকাতেও সমান পারদর্শী লানজিনি। তবে আর্জেন্টিনার মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগে এত এত তারকার ভিড়ে শেষ পর্যন্ত একাদশে জায়গা পাওয়া কঠিনই হবে লানজিনির জন্য।
সাম্পাওলি যদি অভিজ্ঞতা বিচার করে হাভিয়ের মাসচেরানোকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলান আর বামপাশে এঞ্জেল ডি মারিয়াকে নামান সেক্ষেত্রে এভার বানেগা, লুকাস বিলিয়া, জিও লো সেলসো, এনজো পেরেজদের টপকে ম্যানুয়েল লানজিনির জায়গা পাওয়াটা রীতিমতো দুস্কর।
রাশিয়া বিশ্বকাপ নিয়ে লিওনেল মেসিও খুব বেশি আশা জাগাচ্ছেন না। বলেছেন, সেমিফাইনালে যেতে পারলে সেটাই হবে ‘আলবিসেলেস্তে’দের সাফল্য। অথচ সেই দলেই কিনা রণকৌশল ও একই পজিশনে একাধিক খেলোয়াড় থাকার কারণে একাদশে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন ইকার্দি, দিবালা, লানজিনির মতো তারকারা। শেষ পর্যন্ত সবকিছু হোসে সাম্পাওলির হাতেই। আর পর্দার আড়ালে লিওনেল মেসি তো থাকছেনই। ১৬ জুন আইসল্যান্ডের বিপক্ষে তারা কী দল সাজান সেটিই এখন দেখার অপেক্ষায় আর্জেন্টাইন সমর্থকরা।
গ্রন্থনা: তোয়াহা ফারুক
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply