বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করায় বড় ভূমিকা রাখতে চেয়েছিলেন শিনজো আবে

|

ছবি: সংগৃহীত।

নারা শহরে বক্তৃতার সময় শুক্রবার (৮ জুলাই) গুলিবিদ্ধ হন জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। এর কয়েক ঘণ্টা পরই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একজন বিশ্বস্ত বন্ধু হারালো বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নে বন্ধু দেশ জাপানের হয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন শিনজো।

২০২০ সালের ২৮ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে আসেন শিনজো আবে। বহু বছর ধরেই আলসারেটিভ কোলাইটিসে ভুগছিলেন। এর আগে ২০০৬ সালে ৫২ বছর বয়সে জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শিনজো। ২০১২ সালে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়ত্ব পান তিনি। ২০২০ সালে স্বাস্থ্যগত ও রাজনৈতিক চাপে পদত্যাগ করেন। শিনজো আবে জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকেছেন।

বাংলাদেশের প্রতি শিনজো আবের আগ্রহ ছিল প্রথম থেকেই। ২০১৪ সালে তিনি বাংলাদেশ সফরে আসেন। সেবার শিনজো আবের সফরটি ছিল দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এবং প্রকৃতপক্ষে ঐতিহাসিক একটি ঘটনা। কারণ এই সফরের মধ্য দিয়ে জাপান ও বাংলাদেশের বহুমুখী অংশীদারিত্বের ভবিষ্যৎ নির্মিত হয়েছিল। তার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে যান। যা দেশদুটির মধ্যে ‘নতুন মাত্রার অংশীদারিত্বের’ প্রাথমিক সূচনা হিসেবে চিহ্নিত।

শিনজো আবে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক একাধিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে জাপান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে ৬ বিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শিনজো আবে এবং তার তৎকালীন সরকার।

এরপর ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানে রাষ্ট্রীয় সফর যান। সেই সফরে আবের সরকার মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন, ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট লাইন-১, এনার্জি এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন প্রমোশন ফাইন্যান্সিং প্রজেক্টসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশের সাথে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষর করে।

শিনজো আবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতিতে সেবার বলা হয়, ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে বাংলাদেশ সরকারকে সব রকমের সহায়তা করতে চায় শিনজো আবে।

শিনজো আবের আগ্রহ ও সহায়তার কারণেই বাংলাদেশে একাধিক জাপানি কোম্পানি ব্যবসা শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করে শিনজো আবের সরকার। জি২জি সহযোগিতার পাশাপাশি আবের নেতৃত্বে জাপান জাইকার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান করেছে বাংলাদেশকে। যার লক্ষ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই উন্নয়নে সহায়তা করা।

পদত্যাগ করার মাত্র কয়েকদিন আগেও বাংলাদেশের সাতটি মেগা প্রকল্পের জন্য সহযোগিতা করে গেছেন শিনজো। ২০২০ সালের ১২ আগস্ট জাইকা বাংলাদেশে সাতটি মেগা প্রকল্প পরিচালনার জন্য ৩ লাখ ৩৮ হাজার ২৪৭ মিলিয়ন ইয়েন পর্যন্ত ওডিএ ঋণ প্রদানের জন্য বাংলাদেশের সাথে একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে জাপান। এরও পেছনে ছিলেন শিনজো।

এই সাতটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প, ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট উন্নয়ন প্রকল্প উত্তর রুট, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট, ফুড ভ্যালু চেইন ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট এবং নগর উন্নয়ন ও সিটি গভর্নেন্স প্রজেক্ট।

বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু শিনজো আবের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এরই মধ্যে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, শিনজো আবে আমার ঘনিষ্ঠজন ছিলেন এবং তিনি বাংলাদেশেরও বন্ধু ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দাও জানান তিনি।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply