৩৫দিন পর খুলেছে নড়াইলের সেই কলেজ, যাননি অধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীরা

|

শিক্ষক হেনস্তার ঘটনার ৩৫দিন পর খুলেছে নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ। তবে কলেজে যাননি অধ্যক্ষ, উপস্থিত হয়নি কোনো শিক্ষার্থীও। এমনকি ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাড়িতে ফেরেননি হেনস্থার শিকার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। এ খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। রোববার (২৪ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৫-৬ জন শিক্ষক গেলেও পরে আরও ১০-১২ জন শিক্ষক কলেজে উপস্থিত হন।

কলেজ খোলার প্রথম দিন সকালে ওই কলেজে যান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরী। এ সময় তার সাথে ছিলেন সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) সাজেদুল ইসলাম এবং স্থানীয় মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সাইফুল। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ বন্ধের পর কলেজ খুলেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষকে ছাত্র-ছাত্রীদের ফোনে খবর দিতে বলা হয়েছে। আশা করছি দুয়েক দিনের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা কলেজে ফিরবে। প্রথমে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে। পরে পর্যায়ক্রমে একাদশ ও ডিগ্রি পর্যায়ের ক্লাস শুরু হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, দুপুর ১২টার দিকে তিনি খবর পান, আজ কলেজ খুলছে এবং কলেজে যেতে হবে। ওই শিক্ষক বলেন, তারপর আমরা কলেজে আসি। এদিকে হেনস্তার ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস নিজ বাড়িতে ফেরেননি। তিনি কোনো আত্নীয়-স্বজনের বাড়িতে থাকতে পারেন বলে ধারণা করছেন তিনি। তবে অধ্যক্ষের বাড়িতে পরিবারের অন্যান্যরা রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

অধ্যক্ষ হেনস্থা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানার ওসি (চলতি দায়িত্বে) মো. মাহামুদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় মির্জাপুর
গ্রামের আফজাল শেখের পূত্র মির্জাপুর কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রিপন শেখ রিপু শনিবার (২৩ জুলাই) রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে শিক্ষকদের মোটরসাইকেল পোড়ানোর সাথে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। রিপনের বয়স সাড়ে ১৬ বছর হওয়ায় তার রিমান্ড আবেদন করা হয়নি। তবে গ্রেফতার হওয়া মির্জাপুর কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রায়হানের বিরুদ্ধে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত এ রিমান্ড কার্যকর হবে।

আজ দুপুরেই সদর আমলি আদালতে শুনানি শেষে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদা তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেফতার হয়েছে। আসামিরা সবাই জেল হাজতে রয়েছে।

এদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কয়েকদিন ছুটিতে থাকবেন এবং তারপর কলেজে যাবেন বলে জানিয়েছেন কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্ত্তী। অন্যান্যদের অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেছেন, শনিবার রাতেই কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। হঠাৎ সিদ্ধান্ত হওয়ায় এখনও সবাই কলেজ খোলার খবরটি জানে না, যার ফলে শিক্ষার্থীরা কলেজে আসেনি।

প্রসঙ্গত, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর দেয়া একটি বিতর্কিত ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সংকট শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানালে তিনি সকলের পরামর্শে ওই শিক্ষার্থীকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। এ সময় অন্তত ১০ জন আহত হন। ঘটনার দিন ১৮ জুন, বিকেলে পুলিশের উপস্থিতিতে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং ফেসবুকে পোস্ট করা ওই শিক্ষার্থীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply