রানি এলিজাবেথের মৃত্যু; ইতিহাসের অনন্য এক অধ্যায়ের সমাপ্তি

|

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটলো একটি যুগের। মাত্র ২৫ বছর বয়সে পরেছিলেন রানির মুকুট। সেই থেকে রাজ সিংহাসন আলো করে ছিলেন টানা ৭০টি বছর। এই দীর্ঘ সময়ে, কেবল যুক্তরাজ্য নয়, বিশ্বজুড়েই হয়ে উঠেছিলেন রানি শব্দের প্রতিশব্দ। কয়েকটি প্রজন্ম রানি বলতে কেবল দ্বিতীয় এলিজাবেথকেই চিনেছে।

চলতি বছর জুনেই উদযাপিত হয় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহনের প্লাটিনাম জুবিলি। চারদিনের উৎসবে মাতোয়ারা হয় ব্রিটেন। শামিল হন রানি নিজেও। জনসমক্ষে সেটাই হয়ে থাকলো তার শেষ উপস্থিতি।

১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন এলিজাবেথ আলেক্সান্দ্রা মেরি উইন্ডসর। ১৯৩৬ সালে প্রিন্স এডওয়ার্ড অষ্টম স্বেচ্ছায় সিংহাসন ছাড়লে ঘটনাক্রমে রাজা হন এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ। তুলনামূলক কম বয়সে তার মৃত্যু হলে তরুণী অবস্থায়ই এলিজাবেথকে বসতে হয় সিংহাসনে।

১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি যখন মাথায় রানির মুকুট ওঠে, তার বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কঠিন পরিস্থিতি, রাজতন্ত্রই প্রশ্নের মুখে; এমন অবস্থায়, সিংহাসন টেকাতে পারবেন কিনা-তা নিয়েই ছিল সন্দেহ। কিন্তু, নিজের বুদ্ধিমত্তা আর স্থিরতায় এলিজাবেথ জয় করেছেন সব শঙ্কা। দীর্ঘ ৭০ বছর সিংহাসনে থেকে গড়েছেন নতুন রেকর্ড। এর আগে ১৮৩৭ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৬৪ বছর ক্ষমতায় ছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া।

রানি এলিজাবেথের চোখের সামনেই সৃষ্টি হয়েছে ৯০টির বেশি দেশ। যুক্তরাষ্ট্রে বদল হয়েছে ১৩ জন প্রেসিডেন্ট। তার সময়ে, ব্রিটেন দেখেছে ১৬ জন প্রধানমন্ত্রী। মৃত্যুর দুদিন আগেও তার সাথে দেখা করে দায়িত্ব নেন নবনিযুক্ত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস।

রয়্যাল বায়োগ্রাফার পেনি জুনর বলেন, রানি এলিজাবেথের শাসনামলকে ইতিহাসে দেখা হবে পরিবর্তনের সময় হিসেবে। ৭০ বছরে নাটকীয় সব পরিবর্তন এসেছে বিশ্ব, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায়।

ব্রিটেনের সাম্রাজ্য ক্রমশ ছোট হয়েছে রানির চোখের সামনে। তবে কমনওয়েলথের মোড়কে বেশ কিছু দেশের দেশের অলংকারিক রানির পদে ছিলেন। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ ১৫টি দেশে রানি হিসেবে সম্মান জানানো হতো তাকে।

লন্ডন সিটি ইউনিভার্সিটির হিস্ট্রি অব মোনার্কি’র অধ্যাপক অ্যানা হোয়াইটলক বলেন, তরুণী অবস্থায় যে অঙ্গীকার এলিজাবেথ করেছিলেন, তিনি আজীবন তা মেনে চলেছেন। রাজনীতিতে নাক না গলিয়েই রাজপরিবারের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। শেষ পর্যন্ত নিজেকে সম্মানের আসনে ধরে রেখেছেন। একজন রাজা বা রানির সাফল্য নির্ভর করে রাজত্বের সুরক্ষা আর উত্তরাধিকার নিশ্চিতের মধ্যে। সেদিক থেকে তিনি সফল।

অনেকটা অলংকারিক পদ হলেও, রাজকীয় আচার-আয়োজনে সবসময়ই সপ্রতিভ উপস্থিতি ছিলো রানির। বৃদ্ধ বয়সেও তার ব্যতিক্রম হতো না। পশ্চিমা বিশ্বে যখন আত্মীয়তার বন্ধন দুর্বল হচ্ছে, তখনও যেন পারিবারিক সম্পর্কের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে ছিলেন রানি এলিজাবেথ। ভালোবাসতেন সন্তান ও নাতি-নাতনি বেষ্টিত হয়ে থাকতে। মৃত্যুর সময় রেখে গেছেন, ৪ সন্তান, ৮ নাতি-নাতনি ও ১২ প্রপৌত্র-প্রপৌত্রী। মাঝেমধ্যে রাজপরিবারে টানাপোড়েনের আলাপ উঠলেও, বটবৃক্ষ হয়ে সবাইকে আগলে রেখেছেন তিনি।

১৯৪৭ সালে এলিজাবেথ বিয়ে করেন রয়্যাল নেভির কর্মকর্তা ফিলিপ মাউন্টব্যাটেনকে। সংসার করেন দীর্ঘ ৭৪ বছর। গত বছর স্বামী প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুর পর থেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন রানি।

/এসএইচ



সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply