যে লুসাইলে সৌদি আরবের কাছে হার দিয়ে শুরু হয়েছিলো আলবিসেলেস্তেদের বিশ্বকাপ যাত্রা, সেখানেই তারা ঘুচালো ৩৬ বছরের শিরোপার খরা। আর সেই জয়ের অন্যতম এক নায়ক আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক বাজপাখি খ্যাত এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। ২০১৮ বিশ্বকাপে গ্যালারিতে টিকিট কেটে আর্জেন্টিনার খেলা দেখেছিলেন এই গোলরক্ষক। সেখান থেকে আরেক বিশ্বকাপ ঘুরতেই গোল্ডেন গ্লাভস হাতে দলের কাণ্ডারি বনে গেছেন মার্টিনেজ।
পাখিদের ডানা লুটে হলেও তোমার আকাশ ছোয়ানো চাই। ডানা নেই, তবে ডানাহীন মার্টিনেজ মাটিতে দাঁড়িয়েই ঠিকই ছুয়েছেন আকাশটা। বিশ্বকাপের শুরুতেই বলেছিলেন, মেসির জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারেন। প্রয়োজন হলে যুদ্ধে যেতেও প্রস্তুত ছিলেন এই গোলরক্ষক। তিনি তার কথা রেখেছেন। তার নৈপুণ্যেই ফুটবল ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন লিওনেল মেসি। সর্বকালের সেরা উপাধিতে পৌঁছেছেন এলএমটেন।
ডানা নেই, তবু ডানাহীন ওড়া। ২৮ বছর কোনো মেজর শিরোপা ছিলো না, বিশ্বকাপ শিরোপার আক্ষেপ ৩৬ বছরের – আক্ষেপের ঝুলিটা যখন ভারী হচ্ছিলো, তখনি আর্জেন্টিনার গোলবারে দেয়াল হয়ে আবির্ভূত হলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
২০১০ সালে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিলেন আর্সেনালে। তবে, প্রথম একাদশে সুযোগ পেতেন কালেভদ্রে। গানারদের হয়ে পার করেছেন ১০ বছর।
কোচের প্রথম পছন্দের তালিকায় কখনোই ছিলেন না তিনি। তাকে সুযোগ না দেওয়ায়, খোদ আর্জেন্টাইন সমর্থকরাও যে ক্ষুব্ধ ছিলেন। ২০১৮ বিশ্বকাপে গ্যালারিতে টিকিট কেটে আর্জেন্টিনার খেলা দেখেছিলেন। হয়তো সেবার আলবিসেলেস্তাদের বিদায়ে তিনি পণ করেছিলেন, দলের জন্য শিরোপাটা তিনিই এনে দিবেন। হয়তো তখনি ভেবে ফেলেছিলেন, পরের বিশ্বকাপটা তিনি রাঙাবেন আপন রঙে।
সেখান থেকেই রূপকথার গল্পের মতো মার্টিনেজের ক্যারিয়ারে হাওয়া বদল। আর্সেনালের হয়ে বনে গেলেন নিয়মিত মুখ। সেখান থেকেই পরবর্তীতে পাড়ি জমালেন অ্যাস্টন ভিলায়।
২০২১ সালে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে অভিষেক। ক্যারিয়ারটা মাত্র ২৫ ম্যাচের। এর মাঝেই তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন সেরাদের কাতারে। অর্জনের ঝুলিতে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে তিন তিনটি শিরোপা। বিশ্বকাপ সোনালি দস্তানা হাতে শূন্য থেকে বনে গেলেন সেরা।
ফুটবল বিধাতাও হয়তো এদিন চেয়েছিলেন শিরোপাটা মেসি, মারিয়া, মার্টিনেজদের হাতেই উঠুক। ভাগ্যটাও যে এদিন মুখ ফেরায়নি। অতিরিক্ত মিনিটের শেষের দিকে মার্টিনেজের সেই সেভটা তার ক্যারিয়ার সেরা হয়েই থাকবে।
বিশ্বকাপ শুরুর আগেই মার্টিনেজ বলেছিলেন মেসির জন্য শিরোপা জিততে চান। মেসির জন্য জীবনও দিতে পারেন। তবে, জীবন দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। স্বপ্নটা সত্যি হয়েছে, অধরা শিরোপা যে ধরা দিয়েছে তার অতিমানবীয় পারফরম্যান্সেই।
ডাচদের বিপক্ষে টাইব্রেকারের আগে মেসিকে বলেছিলেন, আমি তো আছি। হ্যাঁ, ফাইনালেও তিনি ছিলেন। এমবাপ্পের একের পর এক গোলেও বিচলিত হননিও। পেনাল্টি শুটআউটে প্রতিপক্ষকে রুখে দিয়ে ঠিকই জানান দিলেন মাইন্ডগেমে কেনো তিনি সেরা।
হয়তো ফাইনালেও মেসির কানে কানে বলেছিলেন, চিন্তা করো না, আমি আছি। হ্যাঁ, তিনি ছিলেন, তিনি আছেন, তিনি থাকবেন আর্জেন্টিনার গোলবারের অত্যন্দ্র প্রহরী হিসেবে। তিনিই আলবিসেলেস্তাদের শেষের নায়ক। বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনার গোলবারের এক মহানায়ক হয়েই থাকবেন ৩০ বছর বয়সী এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
/আরআইএম
Leave a reply