কাটছাঁট হচ্ছে বাজেট, কমিয়ে আনা হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির লক্ষ্য

|

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

শেষ হয়েছে চলতি অর্থবছরের ছয় মাস। কিন্তু, স্বাভাবিক হয়নি অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি। সামনে সুখবর আসবে- এ কথাও বলা কঠিন। অনিশ্চয়তার দোলাচলে, ছেটে ফেলা হচ্ছে মূল বাজেট। সংশোধিত বাজেটে কমছে জিডিপি’র লক্ষ্য। বাড়ানো হচ্ছে মূল্যস্ফীতির হার। রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধির হারও নামিয়ে আনতে চায় সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়ন ব্যয়ে আসতে হবে স্বচ্ছতা।

রফতানি আয়ের পালে বইছে হাওয়া; চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসের চিত্র অন্তত তাই বলে। শুধু পোশাক রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৫ ভাগ। কিন্তু তাতেও স্বস্তি নেই। বৈশ্বিক নানান সংকটে, প্রবৃদ্ধির এ ধারাবাহিকতায় আসতে পারে ছন্দপতন। আর তাই, মূল বাজেটে রফতানি আয় প্রবৃদ্ধি ২০ ভাগ ধরা হলেও কমিয়ে তা ৬ ভাগে নামিয়ে এনেছে সরকার।

আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত অর্থনৈতিক সমন্বয় পরিষদের সাম্প্রতিক সভায় নানান সূচকে আনা হয় পরিবর্তন। ৫ দশমিক ৫ ভাগ মূল্যস্ফীতি আটকে রাখার লক্ষ্য ঠিক করা হলেও মধ্যমেয়াদের এসে বৃদ্ধি করা হচ্ছে আরও ২ ভাগ। মূল বাজেট লক্ষ্যের চেয়ে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির হারও ১ ভাগ। কমানো হচ্ছে রাজস্ব লক্ষ্যও। আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করা দরকার।

এ প্রসঙ্গে সিপিডি সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ- বিশেষত, এনবিআরের যে ডিজিটাইজেশনের যে কর্মসূচি হচ্ছে সেগুলোকে আরও বেগবান করা। ঋণখেলাপীর বিরুদ্ধে আমাদের যে জিরো টলারেন্স নীতি তা পুরোপুরি মেনে চলা, আমাদের সর্বক্ষেত্রে সুশাসন ও মানের উৎকর্ষতা ইত্যাদি এখন খুবই জরুরি হয়ে যাবে।

আর্থিক টানাপড়েনে সরকারি ব্যয়ে লাগাম টেনেছে সরকার। সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে আনা হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বা এডিপি’র আকার। ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ছেঁটে ফেলা হচ্ছে সার্বিক বাজেটের আকার।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর এম আবু ইউসুফ বলেন, অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ যে প্রকল্প যেগুলোকে এ, বি বা শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু, সি শ্রেণিতে তারা কোনো বাজেট দিবে না। সেখানে পর্যালোচনার বিষয় আছে। ফিজিক্যাল এবং ফাইন্যান্সিয়াল দুটো বিষয় দেখানো হয় না- এ জায়গায় যেনো সমন্বয় করা হয়। শুধুমাত্র টাকার অংক না দেখিয়ে বাস্তবে কাজের কতোটুকু অগ্রগতি সেটি যেনো সমন্বয় করা হয়।

গত বছর সরকারকে ভাবনায় ফেলে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রার মজুদ পরিস্থিতি। অর্থবছরের শেষে নিট রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নিতে চায় সরকার। কিন্তু রেমিটেন্স আসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিকল্পনামন্ত্রী।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মানুষ হুন্ডিতে টাকা পাঠায় বেশি। মধ্যপ্রাচ্যে যারা কাজ করেন তাদের শিক্ষার হারটা বেশ কম। এরা আমাদের দেশের গ্রামের সাধারণ মানুষ। আমাদের মতো সাহেবদের সাথে তাদের একটা মানসিক দূরত্ব আছে। এরপরও রেমিটেন্স বাড়বে বলে আমি মনে করি। ফসল ভালো আসবে, রেমিটেন্স বাড়বে, গার্মেন্টস সেক্টরের আয় আরও বাড়বে।

প্রসঙ্গত, শুধু সংশোধিত বাজেটই নয়, আসন্ন বাজেট নিয়েও কাজ শুরু করে দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply