অবশেষে আমার কথা কেউ শুনলো; বিনা দোষে ২৮ বছর কারাভোগের পর মুক্ত জনসন

|

আদালতের রায়ে মুক্তির ঘোষণা শুনে আবেগতাড়িত লামার জনসন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত

বিনা দোষে কারাগারে দীর্ঘ ২৮ বছর অতিবাহিত করার পর অবশেষে বন্দি জীবন থেকে পেলেন মুক্তির স্বাদ। ১৯৯৪ সাল থেকে হত্যা মামলার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি জেলে বন্দি ছিলেন লামার জনসন। তিন দশকের আইনি লড়াইয়ের পর মিলেছে তার অতিকাঙ্ক্ষিত মুক্তি। বিচারকের রায়ে মুহূর্তেই আবেগঘন হয়ে উঠে আদালত কক্ষ। জনসন বলে ওঠেন, অবশেষে আমার কথা কেউ শুনলো! খবর ভয়েস অব আমেরিকার।

মিসৌরি জেলে প্রায় তিন দশক অতিবাহিত করা লামার জনসন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের লড়াই কখনোই থামাননি। এমনকি আইনী বিভিন্ন কাজও তার নিজেকেই করতে হয়েছে। এ সপ্তাহে সেন্ট লুইস আদালত জনসনের বিরুদ্ধে আনা হত্যা মামলার রায়ে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করে মুক্তি দেয়। রায় শুনে আবেগতাড়িত জনসন চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়ান কয়েকবার। কোর্টরুমে উপস্থিত জনতা থেকে আসে হর্ষধ্বনি। জনসনের আত্মীয়স্বজন, মানবাধিকার কর্মীরা উল্লাস প্রকাশ করেন। জনসন আলিঙ্গন করেন তার আইনইজীবীকে। বলেন, আমি জানতাম এই দিন আসবে; কথাটা বলতে পারছি না। তবে, সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই কখনও থামাইনি। কারণ, অন্যায়ভাবে আমার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছিল।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে লামার জনসন আরও বলেন, নিজেকে আমি অন্যদের থেকে আলাদা করে নিয়েছিলাম। আমার মনে হয়, আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণের উপায় হচ্ছে, নিজে নিজে যতটা সম্ভব কাজ করে ফেলা। মামলা সংক্রান্ত তথ্যাদি খুঁজে বের করার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। হ্যাঁ, আমি নিজেই সবাইকে চিঠি দিয়েছি।

মুক্ত জীবনে লামার জনসন। ছবি: সংগৃহীত

লামার জনসনের বয়স এখন ৪৯। পরিবারের অনেকেই আর বেঁচে নেই। বাইরের পরিচিত জগতের স্মৃতিটাও যেন ম্লান হওয়ার পথে। এমন সময়েই এলো বহুল প্রতীক্ষিত ঘোষণা। দীর্ঘ ২৮ বছর পর হত্যার অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেন তিনি। ভুক্তভোগী জনসন বলেন, আমার মনে হচ্ছে একটা ভারি বোঝা থেকে মুক্ত হলাম। কখনও কখনও হতাশ হয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস ছিল, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবো।

মাত্র ২০ বছর বয়সে বন্ধু মারকাস বয়েডকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হন জনসন। দুজনেই সে সময় মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিত থাকায় অভিযোগের তীর যায় জনসনের দিকে। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে ব্যর্থ হন জনসন। প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষীর ভিত্তিতে দেয়া হয় মামলার রায়। জনসনের সাজা হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

জেলখানার সময় নিয়ে লামার জনসন বলেন, জেলে সবসময় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছি। প্রথম দিকে কারাগারের নথিপত্র সাজানোর কাজ করতাম। পরে কারাগারে আইনজীবীদের সহায়তার একটা কাজ পাই। তখন প্রচুর আইনের বই পড়তাম। আস্তে আস্তে অনেক বিষয় জানতে শুরু করি। কারাগারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সাথে পরিচিত হই। নিজের মামলা নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করে তথ্যগুলো পর্যালোচনা করতাম।

হাল ছাড়েননি জনসন। রায়ের বিরুদ্ধে বারবার আপিল করেন। কয়েক বছর পর আবারও তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয় পুলিশকে। বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য। একই কারাগারে পাওয়া যায় প্রকৃত খুনীকে। বয়েড হত্যার দায় স্বীকারও করেন তিনি। অবশেষে চলতি সপ্তাহে কারাগার থেকে মুক্তি পান লামার জনসন। শেষ হয় দীর্ঘ ২৮ বছরের বন্দিজীবন।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply