ইরানে কোনো নারী হিজাব না পরলে বা সুষ্ঠুভাবে মাথায় কাপড় না দিলে; মুখোমুখি হবেন বিচারের। তাদের প্রতি দেখানো হবে না কোনো দয়া-করুণা। রোববার (২ এপ্রিলও) এমন হুমকি দিয়েছেন দেশটির প্রধান বিচারপতি গোলাম হুসেইন মোহসেনিজেই। সম্প্রতি ইসলামিক বিধিমালা মানতে বাধ্য করার জন্য কঠোর অবস্থানে গেছে দেশটির সরকারও। যেসব শপিং মল-দোকানপাট ও পর্যটন কেন্দ্রে এ কড়াকড়ি মানা হচ্ছে না- সিলগালা করা হচ্ছে সেগুলো। খবর দ্য ইরান ইন্টারন্যাশনালের।
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই মাথায় হিজাব না দেয়ায় বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন ইরানি নারীরা। সঠিকভাবে পোশাকবিধি না মানা পর্যন্ত, মিলছে না টিকিটও। তবে, কোনো আইনি হয়রানিতে পরিবারগুলোকে ফেলতে চাচ্ছে না এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ। সে কারণেই সতর্কতা।
সম্প্রতি, মাথা ঢেকে না রাখার অভিযোগে লাঞ্ছনার শিকার হন দুই ইরানি নারী। তাদের ওপর এক ব্যক্তির চড়াও হওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পোশাক বিধি লঙ্ঘনের দায়ে আটক হন ওই নারীরা। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে গ্রেফতার হন হামলাকারীও। বিষয়টি ঘিরে ইরানে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ কেউ বলছেন, ভর্ৎসনার শিকার দুই নারীর পোশাকে কোনো ত্রুটি ছিলো না। অযথাই, ওই ব্যক্তির আচরণে দেশজুড়ে উত্তেজনা ছড়ালো। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর, ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর মানসিক অবস্থা কি হয়েছিলো তা অনুমান করতে পারছি।
আবার কেউ কেউ বলছেন, কাউকে ইসলামের সঠিক পথ দেখানোর জন্য মাথায় দই ছুঁড়ে মারাটা কখনই সঠিক কোনো পদ্ধতি নয়। কারো ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ওপর হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। একজন নারী বা পুরুষ কেমন পোশাক পরিধান করবেন- সেটি একান্তই তাদের সিদ্ধান্ত।
এদিকে, ইরানে ইসলামিক বিধিমালা ইস্যুতে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। এবার, দেশটির প্রধান বিচারপতির হুমকি, নীতি লঙ্ঘনকারীরা পাবেন কঠোর সাজা।
ইরানের প্রধান বিচারপতি গোলাম হোসেইন মোহসেনি বলেন, ইরানের কোনো নারী জনসম্মুখে মাথায় কাপড় না দিয়ে আসলে; কোনো দয়া দেখানো হবে না। সরাসরি ইসলামিক বিধিমালা ভঙ্গের অপরাধে তিনি অভিযুক্ত হবেন। বিচার-সালিশের পর দেয়া হবে যথাযথ সাজাও। কারণ, বেপর্দা চলাফেরা ইরানি মূল্যবোধের সাথে শত্রুতার শামিল। পশ্চিমারা ধীরে-ধীরে ধ্বংস করছে আমাদের সমাজ-সংস্কৃতি।
প্রসঙ্গত, গত বছর সেপ্টেম্বরে পোশাক বিধি লঙ্ঘনের দায়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন ২২ বছরের মাহশা আমিনী। পুলিশি হেফাজতে তার মৃত্যুর পর দেশজুড়ে ছড়ায় উত্তেজনা। সমালোচনা হয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও। পুলিশের সাথে দফায়-দফায় সংঘাতে প্রাণ হারান পাঁচ শতাধিক মানুষ। আটক হন ২০ হাজার ইরানি। ১০৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড শোনানোর পাশাপাশি ৪ জনের ফাঁসিও কার্যকর হয়।
/এসএইচ
Leave a reply