পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত করে মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা, অভিভাবকের স্ট্যাটাস নিয়ে তোলপাড়

|

রংপুরের জেলা প্রশাসকের ফেসবুক পেজ (ডিসি রংপুর) থেকে সংগৃহীত ছবি।

স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর:

স্কুলের তিন ঘণ্টার পরীক্ষা এক ঘণ্টায় নিয়ে বিভাগীয় সাহিত্য সম্মেলনে যেতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে রংপুরের বিয়াম স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন এক অভিভাবক। সেটি নিয়েই এখন তোলপাড় চলছে রংপুরে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বুধবার (১৪ জুন) বেলা ১১টায় রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিভাগীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব, বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসকসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্তারা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ সময় গ্যালারিতে বিপুল পরিমাণ স্কুল শিক্ষার্থীকেও দেখা যায়। এরমধ্যে, বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরাও ছিলেন।

সরকারি বিভিন্ন প্রোগ্রামে স্কুল শিক্ষার্থীদের অংশ নেয়া এখন অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। তবে বিষয়টি নিয়ে হাটে হাঁড়ি ভেঙেছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদুল হক।

বেরোবি’র র গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদুল হকের স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট।

বুধবার দুপুরে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট করেন তিনি। ওই পোস্টে তিনি লেখেন, “ভয়াবহ। পরীক্ষা বাদ দিয়ে রংপুর বিয়াম স্কুল এন্ড কলেজের বাচ্চাদের রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমিতে এখন প্রোগ্রাম চলছে। আজ আমার ছেলের সকাল ১০-১টা পরীক্ষা ছিল। এখন সে অনুষ্ঠানের দর্শক। এর দায় কে নিবে? বাচ্চাদের অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া এমনিতেই বেআইনি এর উপর ক্লাস পরীক্ষা বাদ দিয়ে।’

মাহমুদুল হকের এ স্ট্যাটাস শোরগোল ফেলে দিয়েছে রংপুরে। এ বিষয়ে অধ্যাপক মাহমুদুল হক বলেন, আমার ছেলের তিন ঘণ্টার পরীক্ষা ছিল। কিন্তু, এক ঘণ্টা পরীক্ষা নিয়েই ওদেরকে শিল্পকলা একাডেমিতে বিভাগীয় সাহিত্যমেলা প্রোগ্রামে নিয়ে গেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিভাগীয় কমিশারের চিঠির মাধ্যমে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অন‍্যান‍্য পরীক্ষা চলছে তার মধ্যে থেকে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া বেআইনি। কোনোভাবেই একজন শিক্ষার্থীকে তার শিক্ষা কার্যক্রম অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এরকম প্রোগ্রামে নিয়ে যেতে পারে না। আজ পরীক্ষা সত্বেও বাচ্চাদের স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠানো বা যেতে বাধ্য করা হয়েছে এটা বেআইনি।

এ বিষয়ে বিয়াম স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল আহসান হাবিব বলেন, আজকে বুধবার বিভাগীয় সাহিত্য সস্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল। যেহেতু সাহিত্য বিষয়ক অনুষ্ঠান সেহেতু আমার কাছে ছাত্র-ছাত্রীদের চাওয়া হয়েছিল। ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের আজ অর্ধ বার্ষিকী মুল‍্যায়ন ছিল, এটা পরীক্ষা না। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে আর কিছু না।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন জানান, বিষয়টি অবশ্যই আইনসঙ্গত নয়। সম্পূর্ণ বিষয়টি আমি জানি না। বিষয়টি যেনে যাচাই-বাচাই করে প্রয়োজনীয় ব‍্যবস্থা নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আলম। তিনি বলেন, সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার জন্য স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীই শুধু নয় শিক্ষকদেরও ব্যবহার করে সরকারি কর্মকর্তারা। যা কোনোভাবেই আইনসঙ্গত নয়। এ ব্যাপারে সরকারকে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার উদ্যোগ নেয়ার দাবি করেন তিনি।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply