সরকারি প্রকল্পে নয়-ছয়; অভিযুক্তরাই মামলার সাক্ষী আর আসামিরা সবাই ভিক্ষুক (ভিডিও)

|

স্টাফ করেসপনডেন্ট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কাজ ছাড়াই সরকারি প্রকল্পের বরাদ্দ তুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সাম্প্রতিক এক নিরীক্ষায় ধরা পড়েছে ১০ বছর আগের এ জালিয়াতি। কিন্তু, তারপরই হতদরিদ্র কিছু মানুষের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছেন এলজিইডির দায়িত্বরত কর্মকর্তা। জানা গেছে, এ মামলার আসামিরা সবাই ভিক্ষুক, দিনমজুর আর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি। তাদের বিরুদ্ধেই সরকারি বরাদ্দ লোপাটের অভিযোগ এনেছে এলজিইডি। অন্যদিকে, সন্দেহভাজন কর্মকর্তরা বনে গেছেন এ মামলার সাক্ষী।

ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় ১০ বছর মেয়াদী হাওর অঞ্চলের অবকাঠামো ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প (হিলিপ) শেষ হচ্ছে চলতি অর্থবছরে। এরইমধ্যে এ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে পাওয়া গেছে অভিনব জালিয়াতির অভিযোগ।

মামলার আসামিরা সবাই ভিক্ষুক, দিনমজুর আর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি।

জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্পে অধীনে আশুগঞ্জ উপজেলার হোসেনপুর থেকে জুনাকি বিল পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার ডুবোসড়ক ও দেয়াল নির্মাণের কাজ ছিল। ৩৯ লাখ ১১ হাজার টাকা ব্যয়ে কাজটির মেয়াদ ছিল এক বছর। এজন্য স্থানীয় শ্রমিকদের সমন্বয়ে ৫০ জনের দল গঠন করা হয়। কিন্তু, এতো বছর পর হওয়া অডিটে জানা যাচ্ছে যে, বরাদ্দের ২৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা তুলে নেয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আর, বাকি প্রায় ১০ লাখ টাকা তোলাই হয়নি কখনো। সন্দেহের সূত্রপাত সেখান থেকেই।

ঘটনা জানাজানির পর গত মাসে একটি মামলা দায়ের করেন প্রকল্পের সমন্বয়কারী। এ মামলার আসমি করা হয়েছে ১০ বছর আগে নিয়োগ করা সেই শ্রমিকদের। যারা মূলত ভিক্ষুক, দিনমজুর ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি।

আসামিদের দাবি, ৪০ দিনের কর্মসৃজনের অধীনে সে সময় তাদের এনআইডি ও টিপ সই নেয়া হয়। কাজের টাকা তাদের ভাগ্যে জোটেনি কখনো।

তারা বলেন, কাজ দেয়ার সময় তারা ৪০ দিনের কাজের কথা বলেছিলো। দুই-তিনদিন মিটিং করে বলেছিলো যে ছবি তুলবে, আইডি কার্ড দেবে। ২০-২৫ দিন পর আমাদেরকে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে কাগজে কিছু সই ও টিপসই নেয়। আমরা শিক্ষিত না, তাই কাগজে কী লেখা ছিল জানি না। বলেছিল, সাইন দিলে টাকা পাবা না হলে পাবা না। সাইন নিয়ে রেখে দিয়েছে। কাজেও নেয়নি, কিছুই করেনি।

এ প্রসঙ্গে শরীফপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অভিযুক্তরা কেউই পড়ালেখা জানে না। এদের পক্ষে এটা করাও সম্ভব না। এরা কিছু জানেও না।

প্রাথমিক তদন্তে ধরা পড়েছে ভিক্ষুক ও দিনমজুরদের একত্রিত করেছিল প্রয়াত দালাল এরফান মিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, তৎকালীন সময়ে হিলিপের অসাধু কর্মকর্তারা দুর্নীতির আশ্রয়ে টাকা লোপাট করেন।

এ প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মান্নান বলেন, এখানে কাজটা আসলে হয় নাই। এলসিএস যারা তাদের নামেই টাকাটা উঠেছে। এর সাথে যারা জড়িত তা জানা দরকার

এদিকে, ভিক্ষুক আর দিনমজুররা যেখানে মামলার আসামি সেখানে সাক্ষী করা হয়েছে প্রকল্পের ২০১৩ থেকে এখন পর্যন্ত কর্মরত ১৪ জন কর্মকর্তাকে। যাদের মধ্যে আছেন সন্দেহভাজনরাও। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি মামলার বাদি ব্রাহ্মণবাড়িয়া হিলিপ প্রকল্পের জেলা প্রকল্প সমন্বয়কারি মো. নুরুল আমিন।

তবে বাদীর আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কমিটি করেছে, টাকা নিয়েছে কিছু কাজ করে নাই। এখন সরকারি কমিটি করে টাকা চাওয়া হলো। বলা হলো, কাজ করুক অথবা টাকা দিক। সে হিসেবেই মামলাটা করা হয়েছে।

সবদিক বিবেচনায় রেখে সুষ্ঠু অনুসন্ধানে অপরাধী শনাক্তের আশ্বাস তদন্ত কর্মকর্তার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি হাবিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, তদন্তের স্বার্থে শুরু থেকে এ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো আমরা নোটডাউন করেছি। তদন্তে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছি।

অনিয়ম-দুর্নীতির পর গত ১০ বছরে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা কে কোথায় কর্মরত বা অবসরে তার সন্ধান করছে গোয়েন্দারা।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply