শত্রুকে কখনও ক্ষমা করেন না পুতিন, প্রিগোঝিনের মৃত্যু কি তারই প্রমাণ?

|

বিশ্বাসঘাতকদের কখনও ক্ষমা করেন না ভ্লাদিমির পুতিন। অতীতে বারবারই সে প্রমাণ রেখেছেন তিনি। ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোঝিনের পরিণতিকেও অনেকেই দেখছেন রুশ প্রেসিডেন্টের প্রতিশোধ হিসেবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে নিজের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছিলেন প্রিগোঝিন। রাখঢাক ছাড়াই পশ্চিমারা বলছে, ওয়াগনার নেতার কোনো ভয়াবহ পরিণতি হবে, তা অনেকটা প্রত্যাশিতই ছিল। খবর আল জাজিরার।

২০০৬ সালে ব্রিটেনে রেডিওঅ্যাক্টিভ পোলোনিয়াম-২১০ বিষপ্রয়োগের শিকার হন রাশিয়ার গোয়েন্দা আলেক্সান্ডার লিটভিনেনকো। ব্রিটিশ নাগরিকত্বধারী আলেক্সান্ডারের মৃত্যুকে ঘিরে তোলপাড় হয় আন্তর্জাতিক মহলে। তদন্তে দায়ী করা হয় রাশিয়াকে।

এরপর ২০১৮ সালে কৌশলে নোভিচক নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করে হত্যা করা হয় আরেক রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তা সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়েকে। মস্কোয় বিষপ্রয়োগের শিকার হন রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সান্ডার নাভালনিও। রাশিয়ার অভ্যন্তরে ও বাইরে পুতিনের সমালোচকদের এমন পরিণতির বহু ঘটনা রয়েছে।

বুধবার (২৩ আগস্ট) পশ্চিম রাশিয়ার ভের অঞ্চলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন। তাই তার মৃত্যুর খবরও নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই পুতিনের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভুত হন প্রিগোঝিন। প্রকাশ্যে একের পর এক অভিযোগের তীর ছোঁড়ার মধ্য দিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন আগেই। সবশেষ সেনা বিরোধী বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে নিজের পায়েই নিজে কুড়াল মারেন তিনি। ওই ঘটনার পর ভিডিও বার্তায়, ওয়াগনারের বিরুদ্ধে পেছন থেকে ছুরি মারার অভিযোগ করেন পুতিন। এরপর থেকেই ওয়াগনার প্রধান অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন বলে মনে করেন অনেকে।

প্রিগোঝিনের মৃত্যুর সাথে আলোচিত রুশ জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন বরখাস্তের কোনো সংযোগ থাকতে পারে বলে মনে করছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক। মঙ্গলবার মহাকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় সুরোভিকিনকে। এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধের দায়িত্ব থেকেও তাকে বরখাস্ত করা হয়।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ক্যাথরিন স্টোনার বলেন, বিষপ্রয়োগের মাধ্যমে সমালোচকদের হত্যার অনেক ইতিহাস রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর আছে। মনে হতে পারে, এবার ব্যবস্থা নিতে এত দেরি কেনো হলো? বিদ্রোহের পরই কেনো তাকে হত্যা করা হয়নি? জেনারেল সুরোভিকিনকে সরিয়ে দেয়ার অপেক্ষায় কি ছিলেন পুতিন? প্রিগোঝিনের মৃত্যুকে ঘিরে এসব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।

প্রিগোঝিনের মৃত্যুতে অবশ্য অবাক হয়নি পশ্চিমারা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও তেমনই সুরে কথা বলেছেন। পুতিন যে তার শত্রুদের ক্ষমা করে না সে কথা অনেকটাই প্রমাণিত। তাই ওয়াগনার প্রধানের মৃত্যু অনেকটাই অনুমেয় ছিল বলে জানিয়েছেন বাইডেন। প্রিগোঝিনের মৃত্যুকে পুতিনের সমালোচকদের প্রতি কড়া বার্তা হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply