গাজায় হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি চলছে গণগ্রেফতার, কারাগারে নিয়েও চলছে অকথ্য নির্যাতন

|

গাজায় আগ্রাসনের মধ্যেই পশ্চিম তীরে বেড়ে চলেছে ধরপাকড়। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দাবি, উপত্যকাটিতে ফিলিস্তিনিদের গণহারে গ্রেফতার করছে দখলদার বাহিনী। শুধু তাই নয়, বন্দিদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চলছে ইসরায়েলের কারাগারে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া কয়েকজন কয়েদি ইসরায়েলের কারাগারের সেই বিভীষিকাময় অত্যাচারের কথা প্রকাশ্যে এনেছেন।

সম্প্রতি হঠাৎ এক মধ্যরাতে পশ্চিম তীরে নিজ বাড়ি থেকে আটক হন ২৭ বছর বয়সী হামজা আল কাওয়াসমি। পেশায় যিনি কফি বিক্রেতা। তাকে বিনা বিচারে আটকে রাখা হয় বেশ কয়েকদিন। ছাড়া পেয়ে রয়টার্সকে বন্দিদশার ভয়াবহ স্মৃতি বর্ণনা করেন হামজা।

হামজা বলেন, মধ্যরাতে জিপে করে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরই শুরু হয় নির্যাতন। ইব্রাহিমি মসজিদের কাছাকাছি একটি জায়গায় নিয়ে প্রচণ্ড মারধর করা হয় আমাকে। আরও কয়েকজন কর্মকর্তা যুক্ত হন অত্যাচারে। আমাকে বলতে লাগলেন, আমি আইএস সদস্য। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে হত্যার হুমকিও দিলেন। পরে আমাকে তারা হাজতে নিয়ে যায় এবং সেখানেও প্রচণ্ড নির্যাতন চলে প্রতিদিন।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, গত ছয় সপ্তাহে আটক হয়েছে ২৭০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিনের কমিশন ফর প্রিজনারস অ্যাফেয়ার্সের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি কারাগারে বিনা বিচারে বন্দি রয়েছে পশ্চিম তীরের ৭ হাজার ৮০০ বাসিন্দা। এদের মধ্যে ৩০০ জনই শিশু।

ইসরায়েলের কাছে আটক এক ফিলিস্তিনি শিশুর বাবা বলেন, ১২ বছর বয়সে আমার মেয়েকে আটক করা হয়। সে আমার কাছে এখনও ১২ বছরের। ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় যে ভয় ওর চোখেমুখে ছিল, তা এখনও আমার সামনে ভাসছে। তারা যেকোনো উপায়ে জয় চায়। শিশুসহ সাধারণ মানুষদের হত্যা করে, আটক করে।

গাজা ও পশ্চিম তীরে আগ্রাসনের সাথে সাথেই কারাগারগুলোতেও বেড়েছে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর নির্যাতন। তেল আবিবের চলমান অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত কারাগারে ছয় ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ভিড়ে বোঝাই সেলগুলোতে আহত অবস্থায় পড়ে আছে শত শত বন্দি।

কমিশন ফর প্রিজনারস অ্যাফেয়ার্সের প্রধান কাদুরা ফারস বলেন, যা চলছে তা অপরাধ। জড়িত সব পক্ষকেই দায় নিতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন গাভিরসহ। যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে চারজনের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেয়েছি। এটা প্রমাণিত যে নির্যাতন ও চিকিৎসায় অবহেলার কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাদের যথাযথ ওষুধও দেয়া হয়নি।

আটককৃতদের মধ্যে ১৭৫০ জন হামাসের সাথে সম্পৃক্ত বলে দাবি ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর। তবে বন্দি নির্যাতন নিয়ে মন্তব্যে রাজি নয় নেতানিয়াহু প্রশাসন। যদিও অত্যাচারের বহু তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ সাতায়েহ বলেন, ইসরায়েল প্রতিশোধের মানসিকতা নিয়ে আছে। কারাগারের ভেতরের ভয়াবহ পরিস্থিতি কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে। ২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে তারা। আসলে ইসরায়েলিরা বন্দি বিনিময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে কারণেই বেশি বেশি ফিলিস্তিনিদের আটক করছে তারা।

এর আগে, গত মঙ্গলবার কারাগার পরিদর্শনের পর ইসরায়েলের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেন গাভির ঘোষণা দেন, সন্ত্রাসীদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান দিয়ে শিগগিরই উত্থাপন করা হবে একটি বিল। ফিলিস্তিনি বন্দিদের সেলগুলোয় অবিরাম ইসরায়েলের জাতীয় সংগীত বাজানোর নির্দেশনা দেন তিনি।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply