সড়কে ঘরমুখো মানুষের ঢল, ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক-পিকআপেও ফিরছে গন্তব্যে

|

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, গাজীপুর:

সড়ক ও রেলপথে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে ছুটি পেয়ে শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুর থেকে লাখ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক ঈদ যাত্রায় শামিল হয়েছেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ঢল নামে।মহাসড়কে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে পরিবহন সংকটে পড়েছে অনেকে। পরিবহন সংকটে থাকা এসব যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই খোলা ট্রাক-পিকআপেও নাড়ীর টানে ফিরছেন।

সরেজমিনে গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভবানীপুর এলাকায় ময়মনসিংহগামী বেশ কয়েকটি ট্রাক ও পিকআপ ঈদ যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আর ট্রাকে ওঠার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বসার টুল। জনি নামের ট্রাকের এক সহকারী ময়মনসিংহের ফুলপুরের যাত্রী ডাকছেন।

জনি জানান, পুরো বছরই তার ট্রাক ভবন নির্মাণে কাজে ব্যবহার করা বালু ময়মনসিংহ থেকে এনে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেয়। ঈদের ছুটিতে বালুর ভাড়া না থাকায় মালিক ও চালক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেন। একই কথা জানান, অপর সহকারী আশরাফুল। তিনি জানান, ঈদের ২ থেকে ৪ দিন আগে আয়-উপার্জন বন্ধ থাকে। যাত্রী বহন করে এ সময়টা তারা পুষিয়ে নেন।

সহকারী জনি বলেন, ভবানীপুর থেকে ময়মনসিংহের ফুলপুর পর্যন্ত তারা জনপ্রতি ৪৫০ টাকা ভাড়া চাচ্ছেন। কেউ ৪০০ টাকায় যেতে রাজি হলেও তারা তাকে তুলে নিচ্ছেন।

গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকা থেকে ময়মনসিংহের যাত্রী ৩৫০ টাকায় নিচ্ছেন পিকআপ চালক আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ঈদের আগে অনেক কারখানা বন্ধ থাকে সে কারণে তাদের কোনো কাজ থাকে না। মহাসড়কে অনেক যাত্রী, কেউ কেউ গাড়ি পাচ্ছেন না। যাত্রী পরিবহনের কারণে তাদের আয় বাড়ার সাথে ঘরমুখো মানুষের উপকার হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

পরিবার নিয়ে বাঘের বাজার এলাকায় নেত্রকোণা যেতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মাহবুর রহমান। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে যেসব বাস ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসছে সবগুলোই যাত্রীতে পরিপূর্ণ। সেজন্য তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে উঠতে পারছেন না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে বাধ্য হয়েই পিকআপে করে ময়মনসিংহের বাইপাস পর্যন্ত জনপ্রতি ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে রওনা হয়েছেন।

অপর যাত্রী শাহরিয়ার বলেন, বাসের সংকট রয়েছে, তাছাড়া বাসের ভাড়াও বেশি নিচ্ছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বাস না পেয়ে খোলা ট্রাকে ২০০ টাকা ভাড়ায় রওনা দিয়েছেন। এতে ঝুঁকি থাকলেও বাধ্য হয়েই চলাচল করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ভবানীপুর থেকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে যাচ্ছেন গার্মেন্টস্ শাহজাহান আহমেদ। তিনি বলেন, বাসে ময়মনসিংহের ব্রিজ পর্যন্ত ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। অপরদিকে একই জায়গা থেকে ট্রাক-পিক আপে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। ঝুঁকি থাকলেও বাসের চাইতে সহজেই ট্রাক-পিকআপ পাওয়া যাচ্ছে, ভাড়াও তুলনামুলক কম।

বিষয়টি নিয়ে মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি শেখ মাহবুব মোরশেদ বলেন, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের যাত্রা স্বাচ্ছন্দ্যেময় করতে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে। এখন পর্যন্ত মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে। সোমবার দুপুর থেকে সড়কে যাত্রীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। তারা অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ পাননি। যাত্রীদের ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করতে নিষেধ করা হচ্ছে। এভাবে কেউ চলাচল করলে পুলিশ নামিয়ে দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply