সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম জড়িয়ে ভুয়া এবং অপতথ্যের প্রচার বেড়েছে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোর নাম, লোগো ব্যবহার করে প্রকাশিত সংবাদের সম্পাদিত ফটোকার্ড, স্ক্রিনশট ও শিরোনাম বিকৃত করে প্রচার করা হয়েছে। আন্দোলন পরবর্তী সময়ে এটি আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে যমুনা টেলিশনকে জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরে গণ অভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ১৯৯টি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২৫টি অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে। এসব ঘটনায় ৩টি বিদেশী গণমাধ্যমসহ ২৮টি গণমাধ্যমকে জড়ানো হয়েছে। এর প্রতিটিই ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যমেও প্রচার করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন পরবর্তী আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের অপতথ্য প্রচারে সবচেয়ে বেশি ৫৩বার যমুনা টিভিকে জড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে, যমুনা টিভির ফটোকার্ডের ডিজাইন নকল করে ৪৮টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে তিনটিতে ভুয়া তথ্যের সূত্র হিসেবে যমুনা টিভির নাম, একটিতে ফটোকার্ড এডিট এবং একটিতে শিরোনাম বিকৃত করে ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া, প্রথম আলো পত্রিকাকে জড়িয়ে ১৩টি, আরটিভি ১০টি, কালবেলা ৯টি, সময় টিভি ৫টি, দৈনিক আজকাল ও বাংলাদেশ মোমেন্টসকে জড়িয়ে তিনটি করে, দ্যা ডেইলি স্টার, ডিবিসি নিউজ, ঢাকা ট্রিবিউন, চ্যানেল ২৪, এনটিভি, ইত্তেফাক, কালের কন্ঠ ও নয়া দিগন্তকে জড়িয়ে দুইটি করে, বিবিসি বাংলা, বিডিনিউজ ২৪, বাংলাভিশন, নিউজ২৪, দেশ টিভি, দৈনিক বাংলা, দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস, ঢাকা টাইমস ২৪, সময়ের কণ্ঠস্বর ও বার্তা ২৪ কে জড়িয়ে একটি করে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়া, বিদেশী গণমাধ্যম আল জাজিরা, এনডিটিভি ও আনন্দবাজারকে জড়িয়ে একটি করে অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে গুজবের ভয়াবহতা বেড়েছে। অপপ্রচারকারীরা গণমাধ্যমকে গুজব প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। অথচ গণমাধ্যমগুলো আদতে এমন তথ্য প্রচারই করেনি।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ভুয়া ফটোকার্ডের মাধ্যমে ছড়ানো ৭৮টি গুজব শনাক্ত করেছে এই ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া, কোনো ভুয়া তথ্যের সূত্র হিসেবে গণমাধ্যমের নাম বা লোগো ব্যবহার, প্রকাশিত সংবাদের স্ক্রিনশট সম্পাদনা (এডিট) করে ভিন্ন তথ্য বসানো, প্রকাশিত ফটোকার্ড এডিট করে আসল তথ্য পাল্টে দিয়ে ভুয়া তথ্য বসিয়ে প্রচার, শিরোনাম বদলে দিয়ে ভিন্ন শিরোনামে প্রচারের মাধ্যমে মানুষের মনে বিভ্রান্তির জন্ম নিচ্ছে।
গত দুই মাসে গণমাধ্যমকে জড়িয়ে রাজনৈতিক বিষয়ে সর্বোচ্চ ৪৭টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, জাতীয় বিষয়ে ৩১ শতাংশ এবং খেলাধুলা বিষয়ে ৮ শতাংশ হারে অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। রাজনৈতিক এসব অপতথ্যের প্রচারে সবচেয়ে বেশি (২১টি) যমুনা টিভিকে ব্যবহার করা হয়েছে।
এর মধ্যে, গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ড. ইউনূসকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। তাকে জড়িয়ে ২০টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এক্ষেত্রে অপপ্রচারকারীরা গণমাধ্যমের নাম সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে। আদতে এরকম কোনো সংবাদই গণমাধ্যমগুলো প্রচার করেনি।
এই তালিকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। পরের দুই অবস্থানে যথাক্রমে ক্রিকেটার ও সাবেক এমপি সাকিব আল হাসান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ রয়েছেন।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, গণমাধ্যমকে জড়িয়ে প্রচারিত অপতথ্যগুলো অনেক নেটিজেন সতর্কবাণী উল্লেখ ছাড়াই ব্যাঙ্গাত্মক হিসেবে শেয়ার করেন। গণমাধ্যমের নকল ফটোকার্ড দেখে বা কোনো পোস্টে তথ্যের সূত্র হিসেবে গণমাধ্যমের নাম দেখে অনেকেই বিষয়টিকে সত্য বলে ভেবে নেন। ফলে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম এবং দর্শক উভয়ই প্রতারিত হন। অনেকক্ষেত্রে এসব অপতথ্য সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের প্রতি পাঠক এবং দর্শকদের বিশ্বাসে চিড় ধরাতে সক্ষম।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, গণমাধ্যমগুলো ইদানিং তাদের নামে ছড়ানো গুজবগুলো পরবর্তীতে পোস্ট দিয়ে জানাচ্ছে যে এটি তাদের প্রকাশিত কোনো তথ্য বা ফটোকার্ড নয়। তবে পদক্ষেপ হিসেবে এটি যথেষ্ট নয় বলে মনে করে এই ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলোকে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। গণমাধ্যম ছাড়াও পাঠক-দর্শকদের সচেতনতা ও প্রাথমিক যাচাইয়ের মানসিকতা রাখারও পরামর্শ দেয়া হয়।
/আরএইচ
Leave a reply