তোয়াহা ফারুক:
ছাত্ররাজনীতিতে এখন আলোচনার কেন্দ্রে ডাকসু নির্বাচন। ২৮ বছর পর হতে যাওয়া এ নির্বাচন ঘিরে প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্যতম বৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ঘুরে ফিরে আসছে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার বিষয়টিও। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডাকসু নির্বাচনের আগেই ঘোষণা করা হবে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। একই সময়ে ঘোষিত হতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটিও। এ নিয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
অনেক যাচাই বাছাইয়ের পর গত বছরের ৩১ জুলাই রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন ঘোষিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ দুই নেতার নামও। যেখানে সভাপতি হন সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক করা হয় সাদ্দাম হোসাইনকে। কেন্দ্রীয় দুই নেতার মতো তারা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের ছাত্র। এছাড়া, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হন মোঃ ইব্রাহিম এবং সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় যথাক্রমে মেহেদী হাসান ও মোঃ জোবায়ের আহমেদকে।
দায়িত্ব নিয়ে দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার ঘোষণা দেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু অর্ধবছর পেরিয়ে গেলেও সেই কমিটির দেখা মেলেনি। এর ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি কমিটি হওয়া না হওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টির কথাও জানিয়েছেন ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। তাদের শঙ্কা দ্রুতই গ্রহণযোগ্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে ‘চেইন অব কমান্ড’ সুসংহত করা না গেলে ডাকসু নির্বাচন ঘিরে সৃষ্টি হতে পারে অস্থিরতা। তবে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যমুনা নিউজকে জানিয়েছেন ডাকসু নির্বাচনের আগেই ঘোষণা করা হবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন জানান, আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটির সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। যেদিন নেত্রী অনুমোদন দেবেন সেদিনই ঘোষণা করা হবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
একই কথা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীরও। তিনি জানান, কমিটি ঘোষণা কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। নেত্রীর নির্দেশ পেলেই আমরা কমিটি ঘোষণার জন্য প্রস্তুত আছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার আগে সবদিক বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। এ মুহূর্তে কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব তা চায় না। তবে, ডাকসু নির্বাচনের আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত।
যদিও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জানাচ্ছে কমিটি প্রস্তুত, তবুও পদ পাওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের মাঝে শেষ মুহূর্তের তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে। বৃহৎ সংগঠনে পদ পাওয়ার এমন আকাঙ্ক্ষাকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
প্রতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে দেখা যায়। এ কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি না হওয়ায় আটকে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিও। কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে সমন্বয় করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কমিটি গঠনে আমরা প্রস্তুত। এখন, কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত হওয়ার অপেক্ষা।
এদিকে, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই বেশ কিছু বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দের মতবিরোধ দেখা গেছে। কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এটি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। আবার অনেকের মতে, যোগ্যদের পদ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করলে ‘চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠা’ হবে। অবশ্য, সংগঠনের ভেতরে বড় ধরনের কোনো দূরত্ব নেই বলে দাবি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দের। তাদের কথা, যদি কোনো দূরত্ব থেকেও থাকে, সময়ের সাথে সাথে তা মিটে যাবে।
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply