বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। সারা দিন আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে কয়লা হয়েছে অনেক মানুষ।
আগুন নেভানোর পর সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও রোভার স্কাউটের সদস্যরা ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে প্রবেশ করেন। ভেতর থেকে এক এক বের করে আনা হয় মৃতদেহ। এর আগে যাদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয় তাদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ সময় রোভার স্কাউটের কয়েকজন মরদেহ ভরার ব্যাগ নিয়ে ভবনের ভেতরে যান।
কিছুক্ষণ পরে ব্যাগভর্তি এসব মরদেহ এয়ার লিফটে করে নিয়ে যাওয়া হয় কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মরদেহগুলো নামনো হচ্ছে। ঠিক এমন সময় কার যেন মোবাইল বেজে উঠল!
ফায়ার সার্ভিসের লোকজন নিজেদের মোবাইল বাজছে ভেবে পকেটে হাত দেন। কিন্তু না এটি অন্য কারো মোবাইল ফোন নয়। পরক্ষণে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী বুঝলেন ফোনের শব্দ কোথা থেকে আসছে। তিনি মরদেহের ব্যাগটির জিপার খুললেন। মরদেহের ব্যাগ থেকে ফোনটি বের করেন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। এসব তথ্য জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী।
মৃত ব্যক্তির প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে বের করে আনলেন মোবাইল। ওই কর্মী ফোনটি রিসিভ করেন।
বনানীর এফ আর টাওয়ারে বৃহস্পতিবার দুপুরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ভবনের নবম তলায় আগুনের সূত্রপাত। পরে ছড়িয়ে পড়ে ২৩ তলা ভবনের বেশ কয়েকটি তলায়। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।
এই সময়ের মধ্যে হৃদয়বিদায়ক অনেক ঘটনা ঘটেছে। আগুন থেকে বাঁচতে উঁচুতলা এই ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েছেন অনেকে, অনেক নামতে না পেরে ভবনের মধ্যে পুড়ে কয়লা হয়েছেন, অনেকে নামতে গিয়ে হাত পা ভেঙে মৃত্যুর সঙ্গে পাল্লা লড়েছেন, স্বামী-স্ত্রী পুড়ে মরেছেন একসঙ্গে। এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা ইতিহাসের পাতায় সাক্ষী হয়ে থাকেবে।
বনানীর অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় সারা দেশে মানুষ শোকাহত। নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতন। বাতাসে ভাসছে লাশের গন্ধ। তবে এমন মৃত্যু কাম্য নয়। আমরা শোকাহত, আমরা শোকাহত। আমরা পরিত্রাণ চাই।
ভয়াবহ এই আগুনে ২৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের লাশও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আহত অন্তত ৭৩ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
Leave a reply