রাজধানীর হাতিরঝিল লেকে অবৈধভাবে নির্মিত বিজিএমইএ ভবন সিলগালা করে দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। মঙ্গলবার সকাল থেকে পরিচালিত অভিযানে ভবন মালিকদেরকে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য কয়েক দফা সময় দেওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধান ফটকে সিলগালা করে দেয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) খন্দকার অলিউর রহমান।
তিনি বলেন, আমরা ভবন মালিকদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য কয়েক দফা সময় দিয়েছি। আজ বিকাল ৫টার মধ্যে তাদের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হলেও তখন পর্যন্ত বিভিন্ন ফ্লোরে ৭০ ভাগ মালপত্র সরানোর কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর তারা সময় চাওয়ায় আরও দুই ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়।
অলিউর রহমান বলেন, এরপরও দেখা গেছে, কোনও কোনও ফ্লোরে বেশ কিছু মালামাল রয়ে গেছে। সেগুলো নেয়ার জন্য মালিকরা যদি রাজউকের কাছে আবেদন করেন তাহলে রাজউক বিবেচনা করবে কীভাবে সেগুলো তাদের কাছে হস্তান্তর করা যায়। কিন্তু, আজ আমরা সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভবনটির ফ্লোরগুলো সিলগালা করে দিয়েছি।
এর আগে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিট থেকে ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে সিলগালা করে দেওয়ার পর সাড়ে ৭টার দিকে প্রধান ফটকে সিলগালা করা হয়।
প্রসঙ্গত রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে ওঠা বিজিএমইএ’র এই ভবন ভাঙা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় প্রায় ৯ বছর আগে। ২০১০ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে ভবনটি নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে ভবনটি কেন ভাঙা হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন আদালত। পরে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ ভবনটি ভেঙে ফেলার রায় দেন।
ওই রায়ে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অধিগ্রহণ করা জমি ১৯৯৮ সালে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো যেভাবে বিজিএমইএকে দিয়েছে, তা বেআইনি বলে উল্লেখ করা হয় এবং রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে জলাধার আইন ভেঙে নির্মিত বিজিএমইএ ভবনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে ‘একটি ক্যান্সার’ বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
এরপর হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ আপিল দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে বিজিএমইএ’র ওই আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। পরে ২০১৭ সালের ৫ মার্চ আপিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা বিজিএমইএ’র আবেদনটিও খারিজ হয়ে যায়।
এরপরও ভবন না ভাঙতে আদালতের কাছে বারবার সময় চান বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। তবে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল মুচলেকা দিয়ে ভবন ভাঙতে এক বছর সময় পান বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।
এ সময় পার হওয়ায় মঙ্গলবার বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
Leave a reply