অল্পদিনের ব্যবধানে টাকা দ্বিগুণ করার প্রলোভন দিয়ে সিলেটে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। ‘ডিল ফেয়ার’ নামে গোপনে তারা এ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। র্যাবের অভিযানে এ চক্রের গোপন তৎপরতার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে।
বেরিয়ে এসেছে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য। আটক হয়েছে প্রতারক চক্রের এক সদস্য। সোমবার রাত ৯টায় নগরীর জিন্দাবাজারে ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি থেকে তাকে আটক করা হয়।
র্যাব জানায়, ছয় মাস আগে ব্লু ওয়াটার শপিং সিটির ৭ম তলায় অফিস ভাড়া নেয় প্রতারক চক্র। প্রতিষ্ঠানের নাম দেয়া হয় ‘আমার বাজার ডটকম’। অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রির কথা বলে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করেন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আবদুল গণি খান। অনলাইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রির কথা বলা হলেও ভেতরে চলছিল অন্য কারবার।
পাতা হয় ‘ডিল ফেয়ার’ নামক একটি ভুঁইফোড় কোম্পানির প্রতারণার ফাঁদ। সাধারণ মানুষকে ২০০ দিনে টাকা দ্বিগুণ করার লোভ দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এ চক্র। প্রতারক চক্রের মূল হোতা আবদুল গণি খান ছাড়াও এ চক্রে রয়েছেন জৈন্তাপুরের তৈয়ব আলী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক হেলাল আহমদ সবুজসহ আরও অনেকে। এরমধ্যে সোমবার রাতে সবুজকে আটক করেছে র্যাব। আবদুল গণি খান ও হেলাল আহমদ সবুজ উভয়েই একসময় ডেসটিনির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ডেসটিনির পর ‘ডিল ফেয়ার’-এর নামে ফের প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে এ চক্র।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘ডিল ফেয়ার’-এর কর্ণধার আবদুল গণি খান কয়েক বছর আগে সিলেটে এসে দক্ষিণ সুরমায় লজিং থাকতেন। ২০০০ সালে সিলেটের উপশহরে জয়-জুলি বাসায় ডেসটিনির কার্যালয়ে হিসাবরক্ষক হিসেবে চাকরি শুরু করেন গণি খান। বেশি লাভের আশায় কিছুদিন পর ডেসটিনির মার্কেটিংয়ে জড়িত হন তিনি। ওই সময় ডেসটিনির কথিত পিএইচডি পদবিও অর্জন করেন গণি।
প্রতারণার অভিযোগে ডেসটিনি বন্ধ হলে নতুন ‘ধান্দা’র সন্ধানে ঘুরতে থাকেন গণি খান। এরপর ‘ডিল ফেয়ার’ নামক প্রতিষ্ঠানে দুইশ’ দিনে টাকা দ্বিগুণ করার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া শুরু করেন। বাংলাদেশে ‘ডিল ফেয়ার’ নামক কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি নেই। তবে আমেরিকার হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে ‘ডিল ফেয়ার হাওয়াই’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। অথচ সিলেটে আবদুল গণি খান চক্র ‘ডিল ফেয়ার’কে আমেরিকার কোম্পানি বলে প্রতারণা করে আসছিল এতদিন।
সিলেট অঞ্চলে ‘ডিল ফেয়ার’ জন্য কয়েকজন এজেন্টও নিয়োগ করা হয়। এই হায় হায় কোম্পানির হয়ে কাজ করেন সিলেটের সবুর, শাহপরানের সানওয়ার, মোগলা বাজারের হাসান, রাসেল, ওসমানী নগরের স্বপন, শ্রীমঙ্গলের ফারুক হোসেন সুজন, হবিগঞ্জের দুলালসহ বেশ কয়েকজন। র্যাব-৯ এর এএসপি মোহাম্মদ অবাইন জানান, ‘ডিল ফেয়ার’-এর কার্যক্রমে চোখ রাখছিল র্যাব। পরে কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ জানালে র্যাব অভিযান চালায়। আটক করে হেলাল আহমদ সবুজকে। হেলাল গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের লামা মশখেড় গ্রামের মর্তুজ আলীর ছেলে।
Leave a reply