সৌদি আরবের বাজেট ঘাটতি ৫ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে বলে গত বৃহস্পতিবার এক পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। তেলের নিম্ন মূল্যে এ নিয়ে টানা সাত বছর বাজেট ঘাটতিতে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে। সূত্র: আল জাজিরা, ব্লুমবার্গ।
আগামী ডিসেম্বরে চূড়ান্ত বাজেট ঘোষণার আগে এক বিবৃতিতে সৌদি আরবের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-জাদান আগামী বছর দেশটির বাজেট ঘাটতি ১৮ হাজার ৭০০ কোটি রিয়ালে দাঁড়াবে বলে আশা প্রকাশ করেন। চলতি বছরের প্রত্যাশিত ১৩ হাজার ১০০ কোটি রিয়াল বা ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের চেয়ে যা অনেক বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, অর্থনীতি বৈচিত্র্যকরণ ও রূপান্তরমূলক কর্মসূচিতে কোনো পরিবর্তন না এনে ব্যয় কার্যকারিতা উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে ২০২০ সালে ১ লাখ ২ হাজার কোটি রিয়াল বাজেট ব্যয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হতে পারে। একই সময়ে ৮৩ হাজার ৩০০ কোটি রিয়াল রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। বাজেট ঘাটতি থাকতে পারে জিডিপির ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, চলতি বছরে যা জিডিপির ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যয় ধীরে ধীরে সংকুচিত করার পাশাপাশি বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধিতে জোর দিতে চাচ্ছে উপসাগরীয় দেশটি।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট-পূর্ব বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছরের ১ দশমিক শূন্য ৫ ট্রিলিয়ন রিয়ালের (২৮ হাজার কোটি ডলার) সরকারি ব্যয়ের বিপরীতে ২০২০ সালে ১ দশমিক শূন্য ২ ট্রিলিয়ন রিয়াল বাজেট থাকছে। ২০২২ সাল নাগাদ তা আরো কমিয়ে ৯৫ হাজার ৫০০ কোটি রিয়ালে নামিয়ে আনা হবে।
তেলনির্ভর অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর ক্ষেত্রে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের গৃহীত পদক্ষেপ ফল দিতে শুরু করায় সরকারি ব্যয় হ্রাস পাচ্ছে।
রিয়াদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আল-জাদান আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি একটা স্তরে আপনাকে ব্যয় বৃদ্ধি থামাতে হয় এবং যখন অর্থনীতি চাঙ্গা হতে শুরু করে, তখন ব্যয় কমানো উচিত। আগামী বছর বা তত্পরবর্তী বছর আমাদের যে ব্যয় হতো, সেগুলো এখন বেসরকারি খাত থেকে আসবে।
সরকারি কর্মসূচিকে আরো স্বচ্ছ করতে গত বছর থেকে খসড়া বাজেট পরিকল্পনা সরবরাহ শুরু করেছে সৌদি সরকার, যা চূড়ান্ত বাজেটে মোটা দাগে অপরিবর্তিত থাকছে।
অর্থমন্ত্রীর বিবৃতিতে আরো গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে, সেগুলো হচ্ছে:
২০২০ সালে ৮৩ হাজার ৩০০ কোটি রিয়াল রাজস্ব আয় পরিকল্পনা সৌদির, ২০১৯ সালের জন্য যা ছিল ৯১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।
২০২০ সালের জন্য ২ দশমিক ৩০ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হচ্ছে, চলতি বছরে যা ছিল দশমিক ৯০ শতাংশ।
আগামী বছর সরকারি ব্যয় লক্ষ্যমাত্রা ৭৫ হাজার ৪০০ কোটি রিয়াল, চলতি বছরে যা ছিল ৬৭ হাজার ৮০০ কোটি রিয়াল।
২০২০ সালে ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশা সরকারের, চলতি বছরে মূল্যসংকোচন হচ্ছে ১ শতাংশ।
বিশ্বের শীর্ষ অপরিশোধিত তেল রফতানিকারক দেশটি ২০১৪ সাল থেকেই বাজেট ঘাটতিতে রয়েছে। তেলের দামে পড়তিতে দেশটির আয় সংকুচিত হওয়ায় এমনটা হয়েছে। সেজন্য সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে রূপকল্প-২০৩০ ঘোষণা করেছেন।
Leave a reply