ভারতজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যেই বিতর্কিত ও বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বাস্তবায়নের কাজ শুরু করল উত্তরপ্রদেশ। সবচেয়ে বড় এ রাজ্যে বসবাসকারী শরণার্থীদের তালিকা তৈরির সব নির্দেশনা দিয়েছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার।
ভারতের মধ্যে যোগীর রাজ্যই প্রথম এই আইনের আওতায় নাগরিকত্ব প্রদান করার বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে। সিএএ-এর আওতায় পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান-এই তিন দেশের হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে যোগী সরকার। ওই শরণার্থীদের চিহ্নিত করে ইতিমধ্যেই একটি তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খবর এনডিটিভির।
এদিকে দিল্লি পুলিশের এক তদন্তে বের হয়ে এসেছে, নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় ছাত্রছাত্রীদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছিল পুলিশ।
দিল্লির বাসে আগুনও পুলিশ দিয়েছিল। রোববার প্রকাশিত দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির পুলিশ কর্মকর্তাদের তৈরি ‘কেস ডায়েরি’তে বলা হয়েছে, গত ১৫ ডিসেম্বর প্রচণ্ড বিক্ষোভকারীদের দমনে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করতে ‘বাধ্য’ হয়েছিল পুলিশ।
তবে আত্মরক্ষার্থে ওইদিন শূন্যে গুলিবর্ষণ করেছে বলে দাবি করা হয়েছে। ওইদিন বিক্ষোভের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে পুলিশকে গুলি ছুড়তে দেখা গেলেও তা অস্বীকার করে কর্তৃপক্ষ। পরে এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করে নয়াদিল্লি পুলিশ।
সিএএ নিয়ে প্রায় এক মাস ধরে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতোই বিক্ষোভ-প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে উত্তরপ্রদেশ। যোগীর রাজ্যে বিক্ষোভ ঘিরে ছড়িয়েছে হিংসার আগুন।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসার বলি হয়েছেন ২৮ জন। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে পুলিশি নির্যাতনেরও অভিযোগ উঠেছে যোগী প্রশাসনের বিরুদ্ধে। নজিরবিহীন বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সত্ত্বেও সিএএ বাস্তবায়নে গোঁয়ার্তুমি অব্যাহত রেখেছে রাজ্য প্রশাসন।
রোববার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব অবনীশ অবস্থী জানান, ‘পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা যে সব শরণার্থী নাগরিকত্ব ছাড়াই উত্তরপ্রদেশে দীর্ঘ দিন ধরে বসবাস করছেন, তাদের চিহ্নিত করতে রাজ্যের প্রতিটি জেলা শাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আফগানিস্তান থেকে এ রাজ্যে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কম হলেও এখানে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের এমন বহু মানুষ রয়েছেন যারা নিজেদের দেশ থেকে বিতাড়িত।’
ওই সব মানুষের কাছে এ দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। সেই সঙ্গে রাজ্যে কত জন বেআইনিভাবে বসবাস করছেন, তাও জানা যাবে বলে জানান তিনি।
উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্ণৌ, হাপুর, রামপুর, শাহজাহানপুর, নয়ডা এবং গাজিয়াবাদেই পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি শরণার্থীদের ভিড় বেশি বলে দাবি করেছেন অবস্থী। ওই সব এলাকার শরণার্থীদেরও তালিকা তৈরি করা হবে।
তার মতে, একমাত্র ‘বৈধ’ শরণার্থীরাই যাতে এ দেশের নাগরিকত্ব পান, তা নিশ্চিত করাই রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য। সে কারণেই এই তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
অবস্থীর কথায়, ‘এই প্রথম এ ধরনের তালিকা তৈরি হবে এবং নয়া আইনের আওতায় একমাত্র ‘বৈধ’ শরণার্থীদেরই নাগরিকত্ব দেয়া হবে।’ যোগীর সরকার ওই তালিকা ছাড়াও রাজ্যের মুসলিম শরণার্থীদের একটি তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এর পর তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু হবে।
Leave a reply