কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে কুড়িগ্রামে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার দুপুর ১২টায় পর্যন্ত ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ৮ সেমিন্টমিটার এবং ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। এছাড়াও অন্যান্য নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
চরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সাথে যোগাযোগ করে পানিবন্দি মানুষের খবর পাওয়া গেছে। বন্যায় বাড়িঘরে পানি ওঠায় পরিবারের লোকজনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয়েছে। আগাম বন্যার ফলে চরাঞ্চলের আবাদি ফসলাদি পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে তিল, চিনাবাদাম, বাদাম ও সবজিক্ষেতের।
ঋণ নিয়ে ফসল আবাদ করে বড় ধরণের ক্ষতিতে দিশেহারা কৃষক। এছাড়াও সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের সিপের চর, খাসেরচরমহ বেশ কয়েকটি চরের মানুষ করোনার পর থেকে কোন সরকারি সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেন।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের খাসের চর এলাকার বড় কৃষক বাচ্চু ও সামাদ জানান, ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করে ৭ একর জমিতে তিল, চিনাবাদাম আর বাদাম লাগিয়েছেন। বন্যায় সব নিয়ে গেছে। এখন আমরা পথে বসার যোগাড়।
পার্শ্ববর্তী সিপেরচরের হোসেন কবিরাজ জানান, জমির ধান দিয়েই সংসার চলছিল। এবার আগাম বন্যায় আউশ ধান, চিনা, ভুট্টা সব স্রোতের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। বড় কৃষক বলে এখন পর্যন্ত কেউ ত্রাণ দেয়নি। এখন বন্যায় আমাদের দুর্দশা দেখার কেউ নেই। এদিকে সিপের চরের ২০টি নদীভাঙা পরিবার গত ৩ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি সকলের কাছে যেতে। অপ্রতুলতার কারণে অনেকের কাছে ত্রাণ পৌঁছায়নি বলে তিনি স্বীকার করেন। এজন্য হতদরিদ্র এলাকার অসহায় মানুষদের সহযোগিতায় সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় ৬টায় ধরলা ব্রিজ পয়েন্টে ২১ সে.মি. এবং চিলমারী বন্দর পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদে ১৪ সে.মি, নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের ০১ সে.মি. বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি বয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও তিস্তা রেল ব্রিজ পয়েন্টে ৩০ সে.মি. বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী আরিফুল ইসলাম জানান, ভারতের উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হবে। প্রায় দেড় সপ্তাহ এমন অবস্থা বিরাজ করতে পারে। এরমধ্যে কিছুটা কমার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে তিনি জানান।
Leave a reply