তিনি তবে মিথ্যের বেসাতিতে ছিলেন? বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে এ প্রশ্ন তোলা অবান্তর হবে কি? বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প ও তার মিত্র-সহযোগীদের নিষিদ্ধ করার পর অনলাইনে ভুয়া তথ্যের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট এই তথ্য জানিয়েছে।
সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক জিগন্যাল ল্যাবস নামের গবেষণা ফার্ম বলেছে, ওই নিষেধাজ্ঞার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতি নিয়ে অনলাইনে ভুয়া তথ্য ৭৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে উগ্র সমর্থকদের সহিংস হামলার পর টুইটার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপটচ্যাট, স্পোটিফাইসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ট্রাম্প ও তার সহযোগীদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই নাকি এসব মাধ্যমে মিথ্যে তথ্যের পরিমাণ মাত্রাগতভাবে কমে গেছে।
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ঠেকাতে ক্যাপিটল হিলে গত ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকরা হামলা চালায়। এতে ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। ভোট জালিয়াতির ভুয়া অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফল পাল্টে দিতে সমর্থকদের উসকানি দেওয়াসহ নানা তৎপরতা চালিয়ে আসছিলেন ট্রাম্প। ওই হামলার ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়। আহত হয় শতাধিক। তছনছ হয় কংগ্রেস ভবন।
ট্রাম্প ও সহযোগীরা যাতে আরও সহিংসতায় উসকানি দিতে না পারেন, সে জন্য টুইটার, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম সাময়িক-স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর পদক্ষেপ নেয়। জিগন্যাল ল্যাবসের গবেষণায় দেখা যায়, টুইটারে ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করার পরের সপ্তাহে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নির্বাচনে জালিয়াতি নিয়ে আলোচনা ২৫ লাখ থেকে কমে ৬ লাখ ৮৮ হাজারে নেমে এসেছে।
গত ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তার আগে থেকেই নির্বাচন নিয়ে অনলাইনে ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি দেখা যায়। ট্রাম্প তো বটেই, তার সহযোগী ও সমর্থকেরা অনলাইনে ব্যাপক ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দেন। ক্যাপিটল ভবনে হামলার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায় টুইটার। সাময়িক সময়ের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অ্যাকাউন্ট। ৮ জানুয়ারি তারা ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা দেয়!
ফেসবুক প্রথমে ট্রাম্পকে ২৪ ঘণ্টার জন্য নিষিদ্ধ করে। পরে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য তাকে নিষিদ্ধ করে। তবে, এই অ্যাকাউন্ট ভবিষ্যতে ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করেনি তারা।
ট্রাম্পকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করেছে স্ন্যাপচ্যাট। প্ল্যাটফর্মটির পক্ষ থেকে গত বুধবার এই তথ্য জানানো হয়। গত মঙ্গলবার ট্রাম্পের চ্যানেল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় ইউটিউবও। ইনস্টাগ্রাম, টুইস, স্পটিফাইসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট হারিয়েছেন ট্রাম্প সমর্থকরা। এসব পদক্ষেপের টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে নির্বাচনসংক্রান্ত ভুয়া তথ্য অনেক কমে গেছে বলে গবেষণায় দেখতে পেয়েছে জিগন্যাল ল্যাবস।
সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া তথ্য যে প্রবল প্রতিক্রিয়া পায়, সেটিও গবেষণায় দেখা গেছে। একই সঙ্গে এই গবেষণা দেখিয়েছে, ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ও কঠোর পদক্ষেপ নিলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে ভুয়া তথ্যের প্রবাহে লাগাম টানা সম্ভব।
Leave a reply