সুয়েজ খালে কন্টেইনারবাহী জাহাজ আটকে পড়ার ৫ দিন পেরুলেও সাফল্য নেই উদ্ধারকাজে। বরং বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে চলাচল স্বাভাবিক হতে। পরিকল্পনা সাজাতে ব্যস্ত নেদারল্যান্ডস ও জাপান থেকে আসা উদ্ধারকারীরা। খালের দু’পাশে আটকা পড়েছে কয়েকশ’ জাহাজ। প্রতিদিনই গড়ে প্রায় সাড়ে ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আটকে যাচ্ছে খালের প্রান্তে।
এদিকে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যেকার বাণিজ্যিক গেটওয়ে সুয়েজ খালে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জট। খালের প্রবেশমুখে অপেক্ষায় ২ শতাধিক জাহাজ। কিন্তু পথ আটকে রেখেছে, কন্টেইনারবাহী জাহাজ এভারগিভেন।
৫ দিনে একচুলও সরানো যায়নি আটকে যাওয়া বিশাল জাহাজটির। ড্রেজার, টাগবোট নিয়ে চলছে মহাযজ্ঞ। নেদারল্যান্ডস আর জাপান থেকে আনা হয়েছে বিশ্বসেরা বিশেষজ্ঞ দল। চলছে একের এক পরিকল্পনা।
ম্যারিটাইমের টেকনোলজি বিশেষজ্ঞ এভার্ট ল্যাটায়ার বলেন, পশ্চিম তীরের কাছাকাছি রয়েছে জাহাজটি। বাতাসের বিপরীতে একে নেয়া সম্ভব নয়। জাহাজ ঘোরানোর জন্য তাই হাইড্রোডায়ানামিক রোটেশন পদ্ধতি ব্যবহারের পরিকল্পনা চলছে।
জাহাজটি ঘোরাতে সর্বোচ্চ জোয়ারের সুবিধা নিতে চান বিশেষজ্ঞরা। সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। ব্যাপক তৎপরতার পরও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে লেগে যেতে পারে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত। তারওপর রয়েছে সতর্কতা ইস্যু।
ম্যারিটাইমের ইতিহাসবিদ সাল মার্কোগলিয়ানো জানান, পেছনে থাকা কয়েকটি জাহাজ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এভারগিভেন থেকে পানি, তেলসহ মালপত্র বের করে জাহাজ হালকা করতে হবে। তবে খুব সতর্ক হতে হবে। তেল যাতে সমুদ্রে ছড়িয়ে না পড়ে খেয়াল রাখতে হবে।
আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনের ১২ শতাংশই হয় সুয়েজ খাল দিয়ে। দিনে অর্ধশতাধিক জাহাজ পাড়ি দেয় এই পথ। যাতায়াত বন্ধ থাকায় কোটি কোটি ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। বিকল্প পথ খুঁজছে অনেক ব্যবসায়ী। অনেকে বেশি খরচ করে বিমানেও পণ্য পাঠাচ্ছে।
ম্যারিটাইমের ইতিহাসবিদ সাল মার্কোগলিয়ানো আরও জানান, ইউরোপে খুব শিগগিরই জ্বালানির দাম বাড়বে। অপেক্ষায় থাকা অন্তত ১০টি জাহাজে ৩ কোটি ব্যারেল তেল আছে। অন্যান্য জরুরি পণ্যও আছে। স্বাভাবিকভাবেই ই-কমার্সে প্রভাব পড়বে। কেবল ইউরোপে নয়, এশিয়াও ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনৈতিকভাবে।
গত ২৩ মার্চ তীব্র ধুলিঝড়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় এভারগিভেন। আড়াআড়িভাবে ঘুরে গিয়ে খালের দুপাশে আটকে যায় এর দু’প্রান্ত। ১৩শ’ ১২ ফুট দীর্ঘ জাহাজটি দু’লাখ টনের বেশি মালপত্র বহন করছে।
১৮৬৯ সালে চালু হওয়া সুয়েজ খালকে প্রশস্ত করতে বিলিয়ন ডলার খরচ করে মিসর। ২০১৫ সালে উদ্বোধন হয় প্রশস্ত সুয়েজ খালের। যদিও আধুনিক বিশালাকার অনেক জাহাজের তুলনায় তা নিতান্তই সংকীর্ণ।
Leave a reply