অশ্বেতাঙ্গ নারী সদস্যদের উদ্দেশ্য করে চলে অশালীন কৌতুক, শিকার হতে হয় যৌন হয়রানির; এমনকি কৃষ্ণাঙ্গ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্যালুট দিতেও অস্বীকৃতি জানান অনেক অধস্তন সদস্যরা। এমন ভয়াবহ চিত্র মার্কিন সামরিক বাহিনীর। বার্তা সংস্থা এপির বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেকোনো অশ্বেতাঙ্গ মার্কিন সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়েই মানসিকভাবে প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খাবেন। অশ্বেতাঙ্গদের পদোন্নতি হয় কম এবং তারা যৌন হয়রানির শিকার হয় বেশি। কেবল ২০২০ সালেই এ সংক্রান্ত ১২শ’র বেশি অভিযোগ করা হয়েছে।
বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা প্যাম ক্যাম্পোস পালমা এ বিষয়ে জানান, সামরিক বাহিনীর পুরো সিস্টেমটাই এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে অশ্বেতাঙ্গরা প্রতিটি পর্যায়ে নিপীড়ন, হয়রানি আর বৈষম্যের শিকার হন। প্রতি মুহূর্তে তাদের মনে করিয়ে দেয়া হয় যে শ্বেতাঙ্গরাই সেখানে সুপিরিয়র। এমনকি তিনি লাতিন বংশোদ্ভূত বলে অনেক অধস্তন সদস্য তাকে স্যালুটও করতেন না। এসব নিয়ে রিপোর্ট করলেও তার সিনিয়র অফিসাররা কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই তা এড়িয়ে যেতেন। তাছাড়াও তিনি হিস্প্যানিক হওয়ায় লাতিন আমেরিকা বিষয়ক কোর্সে সবার হাসি তামাশার লক্ষ্যে পরিণত হতে হয় তাকে। প্রতিটি ক্লাসে এমনভাবে লাতিন আমেরিকানদের তুলে ধরা হতো যেনো তারা মানুষ নয়, জীব জানোয়ার। সীমান্তে অনুপ্রবেশের উদাহরণ দিতে গিয়ে এক মৃত নারীকে নিয়ে প্রশিক্ষক কৌতুক করলে পুরো ক্লাস হেসে ওঠে তার দিকে তাকিয়ে।
বৈষম্যের এই বিভীষিকা পৌছেছে শীর্ষ পর্যায়েও। মার্কিন সামরিক বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে অশ্বেতাঙ্গ সামরিক কর্মকর্তা তেমন নেই বললেই চলে। হাতে গোনা দুয়েকজন যাও আছেন তারাও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন প্রতি পদে পদে।
মার্কিন বিমান বাহিনীর চিফ অব স্টাফ, জেনারেল চার্লস ব্রাউন জানান, একজন শ্বেতাঙ্গর চেয়ে কৃষ্ণাঙ্গর জন্য মার্কিন সামরিক বাহিনীতে টিকে থাকা কঠিন। নিজেকে প্রমাণের জন্য একজন কৃষ্ণাঙ্গকে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হয়।
মার্কিন নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা রুবেন কিথ গ্রিন তার অভিজ্ঞতায় বলেন, পুরো জাহাজে আমি একাই ছিলাম কৃষ্ণাঙ্গ কর্মকর্তা। যখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েছি, আমাকে বিরোধিতার শিকার হতে হয়েছে। এসব বিষয় যখনই কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তখন সমাধান না করে উল্টো আমাকেই দোষারোপ করা হয়েছে। কখনো কখনো জীবন দূর্বিষহ হয়ে যেতো।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর ৭৩%-ই শ্বেতাঙ্গ। এর বাইরে কৃষ্ণাঙ্গ ৮%, হিস্পানিক ৮%, এশিয়ান ৬% ও অন্যান্য রয়েছেন ৫%।
Leave a reply