কানাডার প্রাক্তন এক স্কুলে গণকবর থেকে ২১৫ শিশুর দেহাবশেষ উদ্ধার হয়েছে।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ১৯ শতকের আদিবাসী স্কুলটিকে ঘিরে নানা বিতর্ক প্রচলিত আছে আগে থেকেই। এবার দুই শতাধিক শিশুর দেহাবশেষ আবারও সামনে নিয়ে এসেছে আদিবাসীদের ওপর চলা নির্যাতনের ইস্যু। এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে কানাডায়।
গত সপ্তাহে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার কামলুপস ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুলটিতে মাটির অভ্যন্তরে প্রবেশকারী রাডার ব্যবহার করে এই দেহাবশেষ আবিষ্কার করা হয়েছে। টেক’ম্লুপস সেকউইপেমেক ফার্স্ট নেশন-এর চিফ রোজান ক্যাসিমির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে খবরটি জানিয়েছে। ক্যাসিমির আবিষ্কারটিকে অবর্ণনীয় ক্ষতি বলে অভিহিত করেছেন এবং জানিয়েছেন সেখানে প্রাপ্ত শিশুদের দেহাবশেষের মাঝে কয়েকজনের বয়স ৩ বছরেরও কম ছিলো।
আবাসিক স্কুলটি ছিলো ভ্যাঙ্কুবার থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে ১৯ এবং ২০ শতকে হাজার হাজার আদিবাসী শিশুদের পাঠানো হতো।
কানাডার আবাসিক স্কুল সিস্টেম পরিবার থেকে আদিবাসী শিশুদের আলাদা করে দেয়। যা কালচারাল জেনোসাইড বা সাংস্কৃতিক গণহত্যা প্রতিষ্ঠা করে। এর পাশাপাশি ২০১৫ সালে ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের ঐতিহাসিক এক প্রতিবেদনে উঠে আসে আরও ভয়াবহ তথ্য। শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, অপুষ্টিসহ আরও অনেক নৃশংসতার শিকার হয় বিপুল সংখ্যক শিশু। এই আদিবাসী শিশুরা স্কুল থেকে আর ফিরে আসেনি।
কমিশন জানিয়েছে, বিদ্যালয়ে ৪ হাজার ১০০ এর বেশি শিশু মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। ২১৫ শিশুকে সমাহিত করা হয় স্কুল গ্রাউন্ডে। প্রায় দেড় লাখ শিশু যোগ দিয়েছিল এখানে। তারা ক্রিশ্চিয়ান চার্চের তত্ত্বাবধানে চলতো। সাংস্কৃতিক গণহত্যার শিকার এই শিক্ষার্থীরা হাম, যক্ষ্মা, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হতো। তারা পর্যাপ্ত খাবার পেতো না, ক্ষুধার্ত থাকতো।
দু’শতাধিক শিশুর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অ্যাসেম্বলি। এ ঘটনাকে হৃদয়বিদারক বলে আখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। টুইটবার্তায় তিনি লেখেন, দেশের ইতিহাসে অন্ধকার ও লজ্জার এক অধ্যায় মনে করিয়ে দিচ্ছে এ ঘটনা।
কানাডার হাউজ অব কমন্সের সদস্য ক্যাথি ম্যাকলেয়ড বলেন, সন্তান হারানোর চেয়ে কষ্টের পৃথিবীতে কিছু নেই। ওইসব বাবা-মা যারা কখনও তাদের সন্তানকে ফিরে পায়নি, যাদের সন্তান আর বাড়ি ফেরেনি, তাদের জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে। এমনকি তারা জানতেও পারেননি কি হয়েছিলো।
টেক’ম্লুপস সেকউইপেমেক ফার্স্ট নেশন জানায়, বিভিন্ন প্রান্তে নানা কমিউনিটিতে তারা যোগাযোগ করে চলেছে যাদের সন্তানরা ওই স্কুলে পড়েছে। তাদের প্রত্যাশা, জুনের মাঝামাঝি থেকে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যাবে।
Leave a reply