জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন, যেখানে একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির সাবেক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর একটি ছবি শেয়ার করেছেন। ওই স্ট্যাটাসে গুণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করে লেখেন, সেদিন তিনি কবি মোস্তফা মীরসহ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের বাসায় টেলিভিশনে মোস্তাকের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান দেখে বিচলিত হয়ে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছিলেন। সেসময় সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নিরুদ্বেগ মুখে ছিলেন। এমনকি তিনি নির্মলেন্দু গুণকে পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন, টেইক ইট ইজি নির্মল। টেইক ইট ইজি।
২৩ জুন রাতে শেয়ার করা ওই স্ট্যাটাসে নির্মলেন্দু গুণ লেখেন, সন্ধ্যার দিকে আমি ও কবি মোস্তফা মীর উনার (অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী) বাসায় গিয়েছিলাম বিটিভির সংবাদ শোনার জন্য। বঙ্গভবনে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পছন্দের মানুষ প্রেসিডেন্ট মোশতাকের শপথ গ্রহণের খবর টিভিতে প্রচারিত হচ্ছিল।
নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোশতাকের শপথ গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা বঙ্গভবনের দরবার হলে মোশতাকের সামনে, পাশে ও পেছনে বীরবেশে দাঁড়িয়ে হাসছিলো।
ঐ দৃশ্যটি দেখে আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়। পাছে মাথা ঘুরিয়ে মাটিতে পড়ে যাই, এই আশঙ্কায় আমি সোফা থেকে নেমে প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বাসার ড্রয়িংরুমের মোঝের কার্পেটে বসে পড়ি এবং স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলি, স্যার দেখেন, দেখেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেখেন। ওদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এরা বাঙালি না স্যার, মনে হচ্ছে এরা পাঞ্জাবি- এরা পাকিস্তানি।
মোস্তফা মীরও আমার কথায় সায় দিচ্ছিল। তখন এই ইংরেজি শিক্ষিত মানুষটি আমাকে পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, টেইক ইট ইজি নির্মল। টেইক ইট ইজি।
আমি অবাক হয়ে স্যারের মুখের দিকে তাকাই। দেখি তার চোখে-মুখে বিন্দুমাত্র উদ্বেগের ছাপ নেই। আমি মোস্তফা মীরকে বলি, চল যাই, আমরা মনে হয় ভুল জয়গায় এসে পড়েছি।
গুণ লেখেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঐ সন্ধ্যাটির কথা আমি ভুলতে পারিনি আজও।
এই মানুষটিকে আমি যখনই ছবিতে দেখি, তখনই ঐ সন্ধ্যার কথা আমার মনে পড়ে যায়, টেইক ইট ইজি, নির্মল। টেইক ইট ইজি।
Leave a reply