যুক্তরাষ্ট্রে আলোচিত জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় হয়েছে। সাড়ে নয় মিনিট ধরে হাঁটু দিয়ে মাটির সাথে চেপে শ্বাসরোধ করে কৃষ্ণাঙ্গ ফ্লয়েডকে হত্যা করা পুলিশ কর্মকর্তা ডেরিক শৌভিনকে দোষী সাব্যস্ত করে তার অপরাধের জন্য সাড়ে বাইশ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত।
জর্জকে হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন হলে পরে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাক্রমে যুক্তরাষ্ট্রে এবং ইউরোপের দেশুগুলোর সাধারণ মানুষ বর্ণবাদের অভিযোগে দেশের অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তির মূর্তি ভাঙচুর করে। এমনকি তারা বর্ণবাদী ব্যক্তিদের নামে করা রাস্তা বা শহরের নাম পরিবর্তন করারও দাবি তোলে। বিশ্বব্যাপী ‘ব্লাক লাইভস ম্যাটার’ স্লোগানে এই আন্দোলন গতি লাভ করে।
তবে ফ্লয়েডের হত্যাকারীর বিচারে আদালত বলেন, এই রায় দেয়ার ক্ষেত্রে আদালত সাধারণ মানুষের মতামত দিয়ে প্রভাবিত হয়নি। আদালত জানান, রায়টি আবেগ এবং করুণার ওপর ভিত্তি করে দেয়া হচ্ছে না। ২২ পৃষ্ঠার ওই রায়ে আদালত আরও বলেন, সুনির্দিষ্ট অপরাধের জন্যই আইন মোতাবেক তার শাস্তি ঘোষণা করা হচ্ছে।
আন্দোলনকারীরা তার ৩০ বছরের কারাগার দাবি করলেও অতীত অপরাধের রেকর্ড না থাকায় রায় নির্দেশকরা তার সাড়ে ১২ বছরের শাস্তির সুপারিশ করেছিলেন। আর ফ্লয়েডের ভাই ডেরেকের ৪০ বছরের সাজা দাবি করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সাড়ে ২২ বছরের সাজা ঘোষণা হয়েছে তার। তবে সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে ডেরিক দুই তৃতীয়াংশ বা ১৫ বছর সাজা ভোগ করার পর প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন বলে জানানো হয়েছে।
আদালত রায়ে বলেছেন, শৌভিন নিষ্ঠুরতার পাশাপাশি শিশুদের সামনে অপরাধটি সংঘটিত করেছেন, তাছাড়া এসময় তার সাথে আরও তিনজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন, ফলে আদালত এটিকে একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ হিসেবে দেখছে। অপরাধী তার দায়িত্বের অপব্যবহার এবং তার প্রতি রাষ্ট্রের আস্থা ভঙ্গ করেছেন, সে কারণে তাকে এই সাজা ভোগ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ খুবই বিরল একটি ব্যাপার, এমনকি সেক্ষেত্রে এমন সাজাও খুব বিরল।
ফ্লয়েডের পরিবার আদালতের এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের আইনজীবী বেন ক্রাম্প এক টুইটে বলেছেন, এই রায়ে অপরাধী জবাবদিহিতার মুখোমুখি হয়েছে। সমাজের ক্ষত সারিয়ে তোলার পথে এটি একধাপ অগ্রগতি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের মে মাসে সিগারেট কিনে জাল নোট দেয়ার সন্দেহে ফ্লয়েডকে পুলিশে দেয় এক দোকানদার। পুলিশ তাকে গাড়িতে তুলতে চাইলে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে অভিযুক্ত ডেরেক মাটিতে ফেলে তার ঘাড়ে হাঁটু চেপে ধরে রাখে। ফ্লয়েড বারবার প্রাণভিক্ষা চাইলেও টানা সাড়ে নয় মিনিট ওই পুলিশ কর্মকর্তা তাকে মাটির সাথে চেপে ধরে রাখেন। ফ্লয়েডের প্রাণভিক্ষা চাওয়ার উক্তিটি বিশ্বজুড়ে মানুষের আবেগকে নাড়া দিয়েছিলো। হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায় তিনি বারবার বলছেন, প্লিজ, প্লিজ, আই কান্ট ব্রেথ।
Leave a reply