চলে গেলেন বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ হাসান আজিজুল হক। বাংলা ছোটগল্পের রাজপুত্র নামে ব্যাপক পরিচিতি পেলেও সাহিত্যের অন্যান্য ক্ষেত্রেও অবাধ বিচরণ ছিল তার। তবে প্রথম উপন্যাস ‘আগুনপাখি’ প্রকাশের আগে ৬৭ বসন্ত অপেক্ষা করেছিলেন তিনি।
এর আগে, অসংখ্য সাক্ষাৎকার ও আলাপচারিতায় উপন্যাস না লেখার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে। সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটে ২০০৬ সালে ‘আগুনপাখি’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। উপন্যাসটির অর্ধেকাংশ ২০০৫ সালে প্রথম আলো ঈদসংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘অপ-রূপকথা’ নামে। পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে কাইয়ুম চৌধুরীর আঁকা প্রচ্ছদে সন্ধানী প্রকাশনী থেকে দুশো চব্বিশ পৃষ্ঠায় বেরোলো উপন্যাসটি। প্রচণ্ড সাড়া ফেলায় চার মাসের মধ্যে প্রকাশিত হয় বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণ। প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থের স্বীকৃতির পাশাপাশি ২০০৮ সালে আনন্দ পুরস্কার পায় ‘আগুনপাখি’।
উত্তম পুরুষে একজন গ্রাম্য নারীর বয়ানে রচিত হয়েছে উপন্যাসটি। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে, আবার বিরাট একান্নবর্তী পরিবারের গৃহবধূ সেই নারী। আর দশজন গ্রাম্য নারীর মতো চার দেয়ালের মাঝেই আবদ্ধ যার জীবন। তার স্বামীরা পাঁচ ভাই, তাদের বউ-ছেলে-মেয়ে এবং একটি বাল্যবিধবা বোন নিয়ে শ্বশুরবাড়ির বিরাট সংসার। সেখানের সংসারের জ্বালা যেমন তাকে পীড়িত করে, সমৃদ্ধির আনন্দও মাতিয়ে তোলে। এরইমধ্যে বিশ্বযুদ্ধের আচমকা প্রভাবে তাদের জীবনে সৃষ্টি হয় টানাপোড়েন। বদলে যেতে থাকে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সম্পর্ক। এরপর সাম্প্রদায়িকতা ও দেশভাগের ডামাডোলে আবর্তিত হতে থাকে জীবন।
এই উপন্যাস নিয়ে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই কথাসাহিত্যিক বলেছেন, মায়ের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি উপন্যাসটি লিখেছেন। উপন্যাসজুড়ে তার পরিবারের প্রভাব ছিল লক্ষণীয়। এ প্রসঙ্গে হাসান আজিজুল হকের কথা, ‘আমার মা দেশভাগের অর্থহীনতা, এর ফলে সৃষ্ট অপচয় নিয়ে তাঁর খেদ যে রকম যৌক্তিকভাবে প্রকাশ করেছিলেন, তা আমাদের বাড়ির অন্য লোকে দূরে থাক, আমাদের বেশির ভাগ ঐতিহাসিকও আজ অব্দি বুঝেছেন কি না, জানি না।’
Leave a reply