মাদক-চোরাকারবারীদের বাড়ি চিহ্নিত করায় বিজিবি’র সমালোচনা

|

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের হবিগঞ্জ অংশে ‘মাদক ব্যবসায়ী’ ও ‘চোরাকারবারিদের বাড়ি’ চিহ্নিত করে লাল সাইনবোর্ড সাটিয়ে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এমন উদ্যোগে মাদক ও চোরাচালান ব্যবসা কমে আসবে বলে মনে করছে বিজিবি।

তবে, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, আইনে এর কোন বৈধতা নেই। এটা ওই পরিবারগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘন।

আর বিজিবি বলছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও চোরাচালানের সাথে জড়িত রয়েছে কয়েকটি চক্র। বিভিন্ন কৌশলে ওই চক্রগুলো বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে তাদের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন সময় তাদেরকে আটক করে মামলা দিলেও কারাগার থেকে বেরিয়ে পুনরায় তারা একই ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ছেন। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেও মাদক এবং চোরাচালান বন্ধ করা যায়নি। অবশেষে অবৈধ এসব ব্যবসায়ীকে সমাজের কাছে চিহ্নিত করে দিতে বাড়ির সামনে সাইন বোর্ড লাগানোর উদ্যোগ নেয় বিজিবি।

তাদের তথ্যমতে, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে মাধবপুর সীমান্ত পর্যন্ত অন্তত দেড়শ’ বাড়িতে এমন সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, কোন বাড়ির সামনে ‘এটি মাদক ব্যবসায়ীর বাড়ি’ আবার কোনটিতে ‘এটি চোরাকারবারীর বাড়ি’ লেখা সাইনবোর্ড রয়েছে। লাল রঙের সাইনবোর্ডের উপর সাদা অক্ষরগুলো দূর থেকেই পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। সম্প্রতি এমন কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা।

বিজিবি-৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসএনএম সামীউন্নবী চৌধুরী বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা থেকে চুনারুঘাট হয়ে মাধবপুর সীমান্ত পর্যন্ত আমার অধীনে। এ জায়গাগুলোতে অন্তত দেড়শ বাড়িতে এমন সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে বিজিবির মামলা রয়েছে তাদের বাড়িতেই মূলত সাইনবোর্ডগুলো লাগানো হয়েছে। তাদের বিরূদ্ধে পুলিশের মামলাকে আমরা কাউন্ট করিনি।

তিনি আরও বলেন, অনেক চেষ্টার পরও তাদের অপরাধ জগৎ থেকে বের করা যাচ্ছে না। তাই সামাজিকভাবে চাপের মুখে থাকলে অপরাধমূলক কাজ ছেড়ে দিতে পারে, এই চিন্তা থেকেই সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বা তারা এ ব্যবসা থেকে সড়ে আসলে সাইনবোর্ডগুলো খুলে নেয়া হবে।

সমালোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, এসব সমালোচনায় আমি কান দেই না। আমি আইন শক্ত করেই এই কাজে নেমেছি। সুতরাং সমালোচনায় কিছু আসে যায় না।

একজনের জন্য পুরো পরিবার কেন চিহ্নিত হবে ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিবারের কোনো সদস্য যখন মাদক বা চোরাকারবারের সাথে জড়িত হয় তখন যদি তারা বাধা না দেয় তাহলে এ অপরাধের দায় পুরো পরিবারের ওপরই পড়ে।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন বলেন, বিজিবি যেটা করছে সেটা একেবারেই সঠিক করেনি, একজনের জন্য পুরো পরিবারকে এভাবে চিহ্নিত করা যাবে না। এই পরিবারগুলোতে শিশুরা থাকতে পারে, বিবাহ উপযুক্ত যুবক-তরুণী থাকতে পারে। তারা হয়তো মাদক ও চোরাকারবারির বিরোধিতা করছে। তাদের এখন ভালো জায়গায় বিয়ে হবে না। এমনকি মানুষ তাদেরকেও খারাপ চোখে দেখবে, এড়িয়ে চলবে।

তিনি বলেন, দেশে আইন আছে। প্রচলিত আইনে মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের বিচার হবে। আমি মনে করি, এটা বিচারের আগে আরেকটি বিচার হয়ে গেল।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply