পাকিস্তানের গ্রাম্য বিচার ব্যবস্থায়, কোনো ব্যক্তি ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে ওই ব্যক্তির কোনো নারী আত্মীয়কে ‘প্রতিশোধমূলক’ ধর্ষণের আদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। এ ধরনের একটি ঘটনায় মঙ্গলবার ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ।
পাঞ্জাব রাজ্যের রাজধানী লাহোর থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের তোবা টেক সিং শহরে গত ২০ মার্চ এ ঘটনাটি ঘটেছে।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা নাইম ইউসুফ এএফপি-কে বলেন, “১৬ বছর বয়সী এক মেয়েকে ধর্ষণকালে হাতেনাতে ধরা পড়ে ওয়াসিম নামের এক ছেলে। এই ঘটনায় প্রতিবেশিরা জড়ো হয়ে ওই ছেলেকে হত্যার দাবি জানায়।
তিনি বলেন, “ছেলের পরিবার বদলা হিসেবে তাদের পরিবারের যে কোনো নারীকে ধর্ষণের প্রস্তাব দেয়। এরপর ছেলের ৪০ বছর বয়সী বোনকে ধর্ষণের মধ্য দিয়ে ‘বদলা নেয়’ ১৬ বছর বয়সী ওই মেয়ের ভাই।”
নাইমের বক্তব্য অনুসারে, দুই পরিবার এ বিষয়ে একটি লিখিত সমঝোতায় উপনীত হয় যে তারা এই বিষয়টি পুরোপুরি ভুলে যাবে।
স্থানীয় থানা প্রধান আব্দুল মজিদ বলেন, “আমাদের একজন সদস্য ওই লিখিত সমঝোতাটি পেয়েছে, এবং এতে স্বাক্ষরকারী উভয় পরিবারের ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
পৌরুষতান্ত্রিক পাকিস্তানে দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল আইনী প্রক্রিয়া এড়াতে দ্রুত বিরোধ এড়ানোর কৌশল হিসেবে ‘প্রতিশোধমূলক’ ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য পন্থা বেছে নেওয়া হয়।
এক্ষেত্রে নারীদের কোনো মতামতের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। দশকের পর দশক ধরে দেশটির নারীরা অত্যন্ত ঘৃণ্য এই বিষয়টির বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছেন।
স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়ে গঠিত জিরগা বা গ্রাম্য সালিশী ব্যবস্থার মাধ্যমে এই আদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু মজিদ জানালেন, ওই এলাকার এই ধরনের কোনো সালিশী ব্যবস্থা নেই। বাসিন্দাদের প্রায় সবাই শ্রমিক শ্রেণির।
জিরগা’র মাধ্যমে ২০০২ সালে এই ধরনের কুখ্যাত একটি ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়াসহ সারা বিশ্বে ঘৃণার ঝড় উঠেছিল। ভাইকে মিথ্যা ধর্ষণের দোষী সাব্যস্ত করে মুখতার মাইকে দলবেধে ধর্ষণের আদেশ দিয়েছিল এই ধরনের একটি স্থানীয় সালিশী ব্যবস্থা।
এই ঘটনায় মাই দেশটির আদালতের গিয়েও বিচার পাননি। ধর্ষকরা তার সামনে দিয়েই জেল থেকে বের হয়ে গিয়েছিল।
যমুনা অনলাইন: এফএইচ
Leave a reply