তিন হাজার টাকার জন্য পেটে টিউমার রেখেই সেলাই

|

তিন হাজার টাকার জন্য এক প্রসূতি মায়ের পেটে টিউমার রেখেই সেলাই করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। শনিবার (১১ ডিসেম্বর) মানিকগঞ্জ শহরের হেলথ কেয়ার মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টিকে ‘অমানবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন।

অভিযুক্ত চিকিৎসক খায়রুল হাসান মানিকগঞ্জ ডক্টরস ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ভুক্তভোগী নারীর নাম আফরোজা আক্তার। তিনি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার নয়াডিঙ্গী গ্রামের নাঈম ইসলামের স্ত্রী।

রোববার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে ভুক্তভোগীর স্বামী নাঈম ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর বাচ্চা প্রসবের জন্য হেলথ কেয়ার মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত ২ টার দিকে তাকে নেয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। শহরের ডক্টরস ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. খায়রুল হাসান ও অ্যানাসথেসিস্ট ডা. আশিককে অপারেশনের জন্য ডেকে আনেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিজারের মাধ্যমে একটি মেয়ে সন্তান প্রসব করে তার স্ত্রী। অস্ত্রোপাচারের সময় তার স্ত্রীর পেটে একটি টিউমার দেখতে পান চিকিৎসকরা। এ সময় ডা. খায়রুল জানান, পেটের টিউমার অপসারণ করতে চাইলে ৩ হাজার টাকা লাগবে। টাকা দিতে রাজিও হন নাঈম।

কিন্তু ভোররাতে টাকা সংগ্রহে একটু দেরি হওয়ায় চিকিৎসক টিউমার রেখেই পেট সেলাই করে চলে যান। নাঈম ও তার পরিবারের সদস্য এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করলেও টাকা ছাড়া টিউমার অপসারণ করতে রাজি হননি ডা. খায়রুল।

নাঈম ইসলাম আরও বলেন, মাত্র তিন হাজার টাকার জন্য চিকিৎসক এমন আচরণ করবেন তা ভাবতেও পারিনি। এই টিউমার অপসারণ করতে আমার স্ত্রীর আবার পেট কাটতে হবে। এটা ভাবতেই খুবই কষ্ট লাগছে।

হেলথ কেয়ার মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান জানান, শুক্রবার রাতে সিজারের পর রোগীর লোকজন আমাকে ফোন করে হাসপাতালে যেতে বলেন। আমি চিকিৎসক খায়রুলকে অনুরোধ করি রোগী টাকা না দিলে আমি টাকা দিবো, তবু টিউমারটি অপসারণ করেন। কিন্তু তিনি আমার অনুরোধ না রেখে পেটের মধ্যে টিউমার রেখেই সেলাই করে চলে যান। এটি খুবই অমানবিক কাজ হয়েছে। এতে তার হাসপাতালের সুনাম নষ্ট হয়েছে বলে জানান হাবিবুর রহমান।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. খায়রুল হাসান বলেন, একটি অপারেশন করতে গিয়ে আরেকটি অপারেশন প্রয়োজন পড়লে তার জন্য বাড়তি টাকা চাইতেই পারি। আবার দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর আবার অজ্ঞান করা লাগতে পারে। এর ফলে অন্য কোনো সমস্য হতে পারে। এ জন্যই টিউমারটি আর অপসারণ করা হয়নি। তাছাড়া এটাতো খুব জরুরি না। পরেও অপারেশন করা যাবে।

মানিকগঞ্জ জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. লুৎফর রহমান জানান, আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। এটা অত্যন্ত অমানবিক কাজ হয়েছে। অভিযোগ পেলে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply