মাংসে অরুচি ধরেছে কুমিরের। আর খেতে চায় না মাংস। মন্দিরের প্রসাদেই তাই পেট ভরাচ্ছে কুমির। নাম বাবিয়া। কুমিরের এমন নামকরণ সাধারণের কাছে অদ্ভুত লাগতে পারে। তবে ভাতের থালা হাতে নিয়ে মন্দিরের পুরোহিত যখন নাম ধরে ডাকেন, তখন লেজ ঝাপটে চলে আসে সে।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, কেরালার এক মন্দিরের লাগোয়া পুকুরে থাকে বাবিয়া। মন্দিরের সিঁড়ি যেখানে থেমেছে, সেখান থেকেই শুরু পুকুর ঘাট। মাছ-মাংস খাওয়া তো দূরে থাক, ছোঁওয়াও পাপ সেখানে। কুমির হয়েও ছাড় পায়নি বাবিয়া।
বেলা গড়ালেই থালা সাজিয়ে অন্নভোগ লাগে বিগ্রহের। তারপর সেই প্রসাদের থালা হাতে মন্দিরের লাগোয়া পুকুর ঘাটে নামেন পুরোহিত। বাবিয়াকে নিজে হাতে তিনি ভাত খাওয়ান। মন্দিরের পুরোহিতের দাবি, এই ব্যবস্থায় বাবিয়ার অসুবিধা হয় না। কুমির হয়ে জন্মালেও আসলে সে শাকাহারি। মাছ বা মাংস নয়, তার প্রিয় খাবার ভাত।
প্রতিদিন দু’বেলা এক কেজি চালের ভাত লাগে বাবিয়ার। পুকুরে অবশ্য মাছও আছে। তবে তাদের না কি সে ছুঁয়েও দেখে না। বয়স ৭০। দু চোয়ালে ঝকঝকে ধারালো দাঁতের সারি। যদিও সেই দাঁত মন্দিরের প্রসাদ চিবিয়েই তৃপ্ত থাকে। উৎসব-পার্বণে মন্দিরের ভোগের সামান্য হেরফের হয় না, তা নয়। তবে গত ৭০ বছরে এটাই বাবিয়ার নিত্যদিনের রুটিন।
আরও পড়ুন: বড় অপারেশন ছাড়াই একজনের কিডনি থেকে ১৫৬টি পাথর বের করলো ডাক্তার!
বাবিয়ার বন্ধু মন্দিরের প্রধান পুরোহিত চন্দ্রশেখর অন্তত তেমনই দাবি করেন। এমনকি বাবিয়া যে সত্যিই নিরীহ, তা প্রমাণ করতে ওই পুকুরে নেমে দিনে অন্তত দু’বার গোসলও করেন তিনি।
মন্দিরে আসা ভক্তদের বাবিয়ার কাছে যাওয়ার উৎসাহও দেন। তাকে এমনও বলতে শোনা গিয়েছে, কাছে গেলেও কিছু করবে না। কারণ ও সাধারণ কুমির নয়, সাক্ষাৎ ঈশ্বরের দূত। প্রধান পুরোহিতের অভয়বাণী পেয়ে বাবিয়ার কাছে যাওয়ার সাহস না পেলেও বাবিয়াকে নিয়ে উৎসাহ বেড়েছে।
কুমির বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ চৌধুরী বলছেন, বিষয়টি কিছুটা হলেও অস্বাভাবিক। যে কুমিরটিকে নিরামিষাশী বলে বর্ণনা করা হচ্ছে, সেটি আসলে মিষ্টি জলের কুমির (মগর)। মাছ এদের স্বাভাবিক খাদ্য। তবে হরিণ, বন্য শূকরের মতো প্রাণীর মাংসও খায় এরা। কুমিরের বেঁচে থাকার তাগিদ অন্যান্য জীবজন্তুর থেকে অনেক বেশি। এরা যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। তবে বিকল্প থাকলে এরা সব সময় স্বাভাবিক খাবার বেছে নেয়। সে ক্ষেত্রে মাছ পেয়েও তা না খাওয়ার বিষয়টি কিছুটা অদ্ভুত।
Leave a reply