রাফায়েল নাদাল: টেনিসের মহাকাব্য ছাড়িয়ে জীবনযুদ্ধের অনুপ্রেরণা

|

রাফায়েল নাদাল। ছবি: সংগৃহীত।

রাফায়েল নাদাল, নামটি শোনা মাত্রই প্রথমে টেনিসের কথা মাথায় আসে অধিকাংশেরই। আর যারা টেনিসের টুকটাক খবর রাখেন, তাদের মধ্যে কারও কাছে নাদাল মানে ‘অবিশ্বাস্য’, আবার কারও কাছে ‘অপ্রতিরোধ্য’ কিংবা ‘অতিমানবীয়’। সম্ভবত সব ক’টি শব্দই সমানভাবে প্রযোজ্য এই স্প্যানিশ টেনিস খেলোয়াড়ের বেলায়। তবে গত ৩০ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া ওপেন চ্যাম্পিয়ন হয়ে জেতেন ২১টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম। আর তাতে ‘দ্য কামব্যাক ম্যান’ শব্দটিও তার নামের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে।

২১ তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় কিংবা দ্য কামব্যাক ম্যান, এই উপাধির বিশেষত্বটা কী? এর উত্তর খুঁজতে ছয় মাস পেছনে ফিরতে হবে। চোটের কারণে তখন নিজের পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতেও পারতেন না নাদাল। এছাড়া গেল মৌসুমে ছয় মাস কোর্টেই নামতে পারেননি ৩৫ বছর বয়সী এই টেনিস তারকা। তাও চোটের কারণে। এরপর কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছিলেন নাদাল। ওই সময়ের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নাদাল নিজেই জানিয়েছিলেন, টানা ১০ মিনিট অনুশীলন করার মতো শারীরিক অবস্থা ছিল না তার। আর তখন তাকে দেখে কেউ ভাবতেও পারেনি, বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম অস্ট্রেলিয়া ওপেনে তিনি কোর্টে নামতে পারবেন।

নাদাল শুধু নামলেনই না, শিরোপা জিতেই এই প্রতিযোগিতার মাঠ ছেড়েছেন। আর রেকর্ড গড়লেন, পুরুষদের মধ্যে সর্বাধিক ২১টি গ্র্যান্ড স্লাম জেতার।

অস্ট্রেলিয়া ওপেনে ফাইনাল জেতার পর হাসি ফুটেছে নাদালের মুখে। ছবি: সংগৃহীত।

অস্ট্রেলিয়া ওপেনের ফাইনালে নিজেই নিজেকে ছাপিয়ে গেছেন। নাদালের প্রতিপক্ষ ছিলেন দশ বছরের ছোট দানিল মেদভেদেভ। প্রথম দু’সেটে পিছিয়ে পড়ে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে লড়াই করে ছিনিয়ে নেন অস্ট্রেলিয় ওপেন। এই সাড়ে পাঁচ ঘন্টায় নাদাল হাঁকিয়েছেন তার জীবনের সেরা কিছু ব্যাকহ্যান্ড ও ফোরহ্যান্ড।

এতদিন পর্যন্ত রজার ফেদেরার ও নোভাক জোকোভিচের সমান ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে একই তালিকায় ছিলেন রাফায়েল নাদাল। তবে এবার তাদেরও ছাড়িয়ে গেলেন। টেনিস দুনিয়ায় তার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেন রজার ফেদেরার ও নোভাক জোকোভিচ। এই দুই টেনিস তারকা প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কতটা উচ্চমানের তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই।

বর্তমানে টেনিসের এই তিন মহারথীর মধ্যে অনেক বিশেষজ্ঞ নাদালকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে রাখতেন। তাদের দাবি, ২১টি গ্র্যান্ড স্লামের মধ্যে নাদাল ১৩টি জিতেছেন ফরাসি ওপেন। যা নিয়ে টেনিস বোদ্ধারা তাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েন না। তাদের মতে, নাদাল কেবল ক্লে কোর্টের রাজা। কিন্তু সেই হিসেবে জোকোভিচকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হবে। কারণ, এই মুহূর্তে টেনিস বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় জোকোভিচ নয়বার অস্ট্রেলিয়া ওপেন আর তিনবার যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এই দুই প্রতিযোগিতাও হয়ে থাকে হার্ড কোর্টে বা লাল মাটিতে। ফলে নাদালের বিরুদ্ধে এই যুক্তি চলে না।

নিন্দুকেরা যাই বলুক, পুরুষদের টেনিসে শ্রেষ্ঠত্বের সিংহাসনে বসার পর নাদালকে অভিনন্দন জানাতে কার্পণ্য করেননি রজার ফেদেরার ও নোভাক জোকোভিচ।

বরং ৩৫ বছর বয়সে এসে দ্রুত সময়ের মধ্যে শারীরিক জটিলতা কাটিয়ে নাদাল যে অবিশ্বাস্য সাফল্য ছিনিয়ে নিয়েছেন, তা নিয়ে কথা বলা ভালো। সবকিছু মিলিয়ে বিবেচনা করলে রাফায়েল নাদালকে বলতে হয়, সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন। শুধু টেনিস দুনিয়ায় নয়, ব্যক্তিজীবনেও নাদালের লড়াই বহু মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply