স্বাবলম্বী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর ফেরত দিলেন জমির

|

স্বাবলম্বী হয়ে নিজের টাকায় জমি কিনে সেখানে ঘর তুলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপহারের জমি ও ঘর ফিরিয়ে দিলেন চুয়াডাঙ্গার জমির উদ্দিন

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারস্বরূপ ভূমিহীনদের ঘর ও জমি উপহার দেয়া হয়। ভূমিহীন হওয়ায় এমনই একটি ঘর পেয়েছিলেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার জমির উদ্দীন। তবে বেশ কিছুদিন সে ঘরে থাকার পর উপহারের সেই জমি ও ঘর ফেরত দিয়েছেন তিনি। কেননা, জমির উদ্দীন নিজেই এখন স্বাবলম্বী। সম্প্রতি নিজের বসবাসের ঘরটি এলাকার অন্য দরিদ্র অসহায় মানুষকে দেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের নিকট ঘর ও জমির দলিল হস্তান্তর করেন তিনি।

জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের জমির উদ্দিন বিশ্বাস (২৮) পেশায় ছিলেন একজন দিনমজুর। সারাদিনের উপার্জিত অর্থ দিয়ে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে কোনোরকমে চলছিল তার সংসার। জমির জানান, ভূমিহীন হওয়ায় ঠাঁই হয় মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া শাহপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে। এতে কিছুটা আর্থিক কষ্ট লাঘব হয় বলে জানান তিনি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাথা গোজার ঠাঁই হওয়ায় এরপর বিভিন্ন এলাকা থেকে কলা কিনে তা বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে প্রতিদিন আয় করছেন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। এতে প্রতিমাসে তার আয় এখন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ফলে পরিবারে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। পরিবার পরিজন নিয়ে এখন ভালোই আছেন তিনি।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ শে জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬৮ টি ঘর উদ্বোধন করেন। ভূমিহীন দিনমজুর জমির উদ্দিন আন্দলবাড়িয়া আশ্রয় প্রকল্পে উপহারকৃত বাড়িতে পরিবারসহ বসবাস করতেন। তিনি এখন স্বাবলম্বী। সম্প্রতি তিনি সস্ত্রীক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার বসত ঘর ও জমির দলিল জমা দেন।

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩ টায় জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ন কবির, আন্দুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তার জমির উদ্দিনের বাড়িতে হাজির হন এবং তার সাথে কথা বলেন।

ঘর ও জমি ফিরিয়ে দেয়ার পর জমির উদ্দিন জানান, এক সময় আমার কিছুই ছিল না। নিজের মাথা গোজার ঠাই ছিল না, না ছিল এক শতক জমি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মাথা গোজার জন্য ঘর ও জমি দিয়েছিলেন সেখানে থেকেই আমি কলার ব্যবসা শুরু করি। আজ আমি স্বাবলম্বী, এখন আমি নিজে অর্থ আয় করে জমি কিনেছি এবং ঘরও তৈরি করেছি। আমার তো এখন নিজের মাথা গোঁজার ঠাই হয়েছে। সমাজে আমি ছাড়াও এখনও অনেক দরিদ্র, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ আছে, এই ঘরটা আমি তাদের দিতে চাই। প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, এখন আমি স্বাবলম্বী। আমি জমি কিনে ঘরও তৈরি করে ফেলেছি। তাই এখন এই ঘর ও জমি আমার আর প্রয়োজন নেই। তাই আমি চাই এই ঘরটা অন্য কোন দরিদ্র মানুষ পাক।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, দেশে যাতে কেউ গৃহহীন মানুষ না থাকেন সে জন্য প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যক্তিদের জমি এবং ঘর প্রদান করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় জীবননগর উপজেলার শাহপুর গ্রামের দিনমজুর জমির উদ্দিনকে একটি ঘর দেয়া হয়েছিল। সেই ঘরে বসবাস করে নিজে পরিশ্রম করে আজ সে স্বাবলম্বী। এজন্য সে নিজ নামে অন্য স্থানে জমি কিনে ঘর করে বসবাস করায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া জমি ও ঘর হস্তান্তর করেন এবং অন্য কোনো দরিদ্র ব্যক্তিকে সেই ঘরটি দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন।


/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply