স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর:
ব্যাংকে রাখা ডিপিএসের টাকা তুলে এনে বসতভিটার জন্য জমি কিনতে বের হয়েছিলেন রংপুরের গঙ্গাচড়ার সরকারি আবাসনে বসবাসকারী জুটমিল শ্রমিক আহেলা খাতুন (৩৫)। কিন্তু ৫ দিন পর তার ক্ষতবিক্ষত লাশ মিলেছে একটি পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে।
রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা তিনটায় গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ক্যাম্পাসের ওই পরিত্যক্ত বিল্ডিং থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ফার্মের শ্রমিক শহিদুল ইসলামের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক এবং ডিপিএসের টাকা নিয়েই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে ধর্ষণ করা হয়েছিল কিনা সেটা জানার জন্য ওই নারীর ভ্যাজাইনাল সওয়াবের আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। একটি সুরক্ষিত গবেষণা কেন্দ্রের ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী।
প্রাথমিক তদন্তের উদ্ধৃতি দিয়ে রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আরিফ হোসেন জানান, গত বুধবার সকালে রংপুরের বুড়িরহাট গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী মৃত আহাদ আলীর স্ত্রী আহেলা বেগম (৩৫) বসতভিটার জমি ক্রয়ের জন্য ব্যাংকে জমানো ডিপিএসের টাকা তোলার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পাওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ওই ডায়েরিতে ফার্মটির শ্রমিক ও নিরাপত্তাকর্মী শহিদুল ইসলাম ওরফে সাইফুলের সাথে আহেলার সম্পর্ক এবং ডিপিএসের টাকা নিয়ে বিরোধের জেরের কথা উল্লেখ করা হয়। জিডিটি নথিভূক্ত হওয়ার পরপরই পুলিশ শহিদুলের বাড়িতে যায়। সেখানে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। কিন্তু শহিদুল আগেই পালিয়ে যায়। জিডির সূত্র থরে ওই গৃহবধূকে অনুসন্ধানে মাঠে কাজ করছিল পুলিশ।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, এরই মধ্যে রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে গবেষণা কেন্দ্রটির মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং স্থানীয় চৌকিদারের মাধ্যম থানায় খবর দেয়া হয় পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে লাশ পাওয়া গেছে। খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং ফার্মের পূর্বদিকের একটি পরিত্যক্ত বাসার মেঝে থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে। এ সময় লাশটির পরনের পোশাক এলোমেলো অবস্থায় ছিল। কাটা ছিল শরীরের বিভিন্ন অংশ। মাথা ইট দিয়ে থেতলে দেয়া হয়েছিল। আমরা লাশটির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে বিকেল সাড়ে ৩টায় ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই। লাশ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। এ থেকে আমাদের ধারণা কয়েকদিন আগেই তাকে সেখানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মী থাকার কারণে গুম করার সুযোগ পায়নি হত্যাকারী। জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ ছাড়াও মরদেহের সুরুতহাল রিপোর্ট এবং আলামত জব্দ করে ছায়া তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি এবং পিবিআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। তদন্ত সংস্থাগুলোর মতে, শহিদুলের সাথে আহেলার পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই আহেলা শহিদুলের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা করেছিল। এমনকি নমিনিও করেছিল শহিদুলকে। তদন্ত সূত্রগুলোর ধারণা, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে সহজভাবেই শহিদুল তাকে ওই পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে নিয়ে গিয়েছিল। সরলভাবে আহেলাও সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে বিরোধ হলে শহিদুল তাকে হত্যা করে।
আহেলার একমাত্র সন্তান রায়হান জানান, আমার মায়ের সাথে ফার্মের নিরাপত্তাকর্মী শহিদুল ইসলামের ভালো সম্পর্ক ছিল। আমরা মা জুট মিলে কাজ করতো। বাবা ৫ বছর আগে মারা যাওয়ার পর ওই মিলে কাজ শুরু করে। এর মধ্যে আমি ঢাকা যাই। সেখান থেকে মাকেও কিছু টাকা পাঠাই। মা প্রতি মাসে ১০ হাজার করে টাকা শহিদুল সাহেবের মাধ্যমে পূবালী ব্যাংক বুড়িরহাট শাখায় ডিপিএস করে আসছিল। মোটামুটি তার ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার মতো জমা হয়েছিল। মা টাকাগুলো ব্যাংকে দিতো শহিদুল সাহেবের মাধ্যমে। কিন্তু জমা স্লিপগুলো শহিদুল মাকে দিতো না। সরকারি জায়গা থেকে আমরা অন্য জায়গায় বাড়ি করার জন্য চেষ্টা করছিলাম। মা সেজন্য ডিপিএস ভাঙিয়ে টাকাগুলো তোলার কথা বলছিল। সেজন্য জমা স্লিপগুলো তার কাছে চায়। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার মা আর শহিদুলের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়। এরপর বুধবার মা ব্যাংকে টাকা তোলার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু আর বাড়িতে ফেরে নি। আমাকে শহিদুল বিষয়টি জানায়নি। আমি অন্য মাধ্যমে বৃহস্পতিবার বাড়ি এসে মাকে খোঁজাখুজি করতে থাকি। কিন্তু পাই
না। আজ আমার মায়ের লাশ পেলাম। মাকে ওরা নির্মমভাবে অত্যাচার করে মেরেছে। পেট ও গলায় ছুড়ি দিয়ে কেটেছে। মাথা থেতলে দিয়েছে। আমি শহিদুলের ফাঁসি চাই।
এ ব্যপারে বুড়িরহাট আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের নিরাপত্তা ইনচার্জ এমদাদুল হক মিয়া জানান, শহিদুল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমাকে ফোন করে বলে একজন আত্মীয়ের চল্লিশা করার জন্য তিনদিনের ছুটি লাগবে। তখন আমি তাকে বলি তাহলে লিখিত আবেদন অফিসে এসে দাও। কিন্তু তার পর থেকে আর ওর কোনো পাত্তা নেই। এখন শুনছি এসব।
জেডআই/
Leave a reply