১৬ বছর পর জানা গেলো আওয়ামী লীগ নেতার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টি ভুয়া

|

তোমরা গরিব ঘরের মুক্তিযোদ্ধা, বড়লোকদের ভিড়ে একদিন তোমাদের নাম থাকবে না। যুদ্ধের ট্রেনিংয়ের সময় এক ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা কথাটি বলেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমানকে। সেনা কর্মকর্তার কথাটি যে আক্ষরিক অর্থেই নিজের জীবনে ফলে যাবে, তা ভাবেননি রণাঙ্গনের এই বীর যোদ্ধা। নামের সাথে মিল থাকায় তার লাল মুক্তিবার্তা নম্বর ব্যবহার করে ২০০৫ সালে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু। গত বছর আদমদিঘি উপজেলার তালিকা যাচাই করে বিষয়টি টের পান মুক্তিযোদ্ধা মজিবর।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবরের অভিযোগের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে শুনানির আয়োজন করে। এতে অংশ নেয়া তিন সাক্ষীর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান জানান, মুক্তিযোদ্ধা মজিবর শুনানিতে তার সপক্ষে দলিলাদি হাজির করলেও, অভিযুক্ত মজনু কোনো দলিল উপস্থাপন করতে পারেননি।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণলায়ের ওয়েবসাইট বলছে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৭৮তম সভায় আওয়ামী লীগ নেতা মজিবর রহমান মজনুর নামে থাকা মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল করা হয়েছে। মাস ছয়েক আগে বিষয়টি নিয়ে প্রথম নিজের ফেইসবুক পেইজ থেকে লাইভ করেন শহর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আবদুল মান্নান আকন্দ। তিনি বলেছেন, গেজেট বাতিলের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, জালিয়াতি করেই মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন মজিবর রহমান মজনু। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম মন্টু বলেন, এ ঘটনা নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারাও।

মজনু একই সাথে শেরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তার এলাকার মুক্তিযোদ্ধারাও বলছেন, তার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে কোনো তথ্য জানা নেই কারো। বগুড়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার তোজাম্মেল হক জানালেন, সে ভারতও যায়নি, যুদ্ধও করেনি, বরং যুদ্ধের সময় সে কুখ্যাত রাজাকার মান্নান বিশ্বাসের বাড়িতে থেকেছে। স্থানীয় আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম পান্না বলছেন, মজনুর বিরুদ্ধে শান্তি কমিটির নেতার মেয়েকে বিয়ে করে চিহ্নিত রাজাকারদের দলীয় পদ দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।

তবে অভিযুক্ত মজিবর রহমান মজনু বলেন, গেজেট বাতিলের আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি পাননি তিনি। বরং এ নিয়ে আপিল এবং হাইকোর্টে রিট করবেন বলেও জানালেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের এক গেজেট মূলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় বগুড়ার শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মজনুর নাম।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply