তাসফিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামী রিমনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

|

তাসফিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি মামুন উদ্দিন ওরফে রিমন (২৫)।

নোয়াখালী প্রতিনিধি:

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে তাসফিয়া আক্তার জান্নাত (৪) হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. রিমন ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম তার জবানবন্দী রেকর্ড করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. সবজেল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সকালে রিমনসহ ৫ আসামিকে আদালতে আনা হয়। তাদের মধ্যে সোহেল উদ্দিন, সুজন, নাইমুল ইসলাম এবং আকবর হোসেনের ৭ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়। দুপুরে আদালতে রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে প্রত্যেককে ৫দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়া প্রধান আসামি রিমন স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হওয়ায় তার জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, বিকেলে রিমনকে বিচারকের খাস কামরায় ডাকা হয়। সেখানে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। পরে, তাকে রাত সাড়ে ৮ টায় খাস কামরা থেকে বের করা হয় এবং জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, এজাহারনামীয় ১নং আসামি মামুন উদ্দিন ওরফে রিমন (২৫), আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দিতে সে জানিয়েছে, এই মামলার আসামি বাদশা তার কাকা হয়। মামলার বাদীপক্ষের লোকজনের সাথে বিবাদীপক্ষের মাটি কাটা নিয়ে বিরোধ চলছিল। ঘটনার দিন মহিনদের বাড়ির সামনে ১০-১২ জন ভিকটিম পক্ষের লোকজনকে মারার জন্য জুয়েলের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে অস্ত্র ভাড়া নেয়। বাদশা ও মহিনের নির্দেশে সে নিজেই শিশু তাসফিয়া আক্তার জান্নাত ও তার বাবাকে গুলি করে। পরবর্তীতে তাসফিয়া আক্তার জান্নাত মারা যায়।

উল্লেখ্য, বুধবার (১৩ এপ্রিল) বিকাল ৪টায় তাসফিয়াকে নিয়ে বাড়ির পাশ্ববর্তী মালেকার বাপের দোকান এলাকার আবদুল্লাহ আল মামুনের বন্ধু ষ্টোরে যান প্রবাসী মাওলানা আবু জাহের। ওই দোকানে গিয়ে তাসফিয়ার জন্য চকলেট, জুস ও চিপস নিয়ে দোকান থেকে বের হওয়ার সময় রিমন, মহিন, আকবর এবং নাঈমের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একদল সন্ত্রাসী আবদুল্লাহ আল মামুনের দোকানে এসে মাটি কাটা নিয়ে বিরোধের জেরে তার উপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে পাশে থাকা গ্যাসের সিলিন্ডারে লেগে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরে, তারা দোকান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা পেছন থেকে তাদের লক্ষ্য করে প্রথমে ইট নিক্ষেপ করলে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাসফিয়া। তারা বাড়ি যাওয়ার সময় পেছন থেকে বেশ কয়েক রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুড়ে সন্ত্রাসীরা। এতে তাসফিয়া ও মাওলানা আবু জাহের গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুলিবিদ্ধ তাসফিয়া ও মাওলানা আবু জাহেরকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা।

পরে সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেয়ার পথে কুমিল্লায় পৌঁছুলে মারা যায় তাসফিয়া। মাটি কাটার জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও মাটি কাটা নিয়ে বিরোধের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ততা ছিল না মাওলনা আবু জাহের বা তার মেয়ে তাসফিয়ার। তবে মাটি কাটা নিয়ে বৈঠকে তারা উপস্থিত ছিল এমন অভিযোগে সন্ত্রাসীদের টার্গেট হন মাওলানা আবু জাহের। আর সেই টার্গেটের শিকার হয়ে প্রাণ হারায় তাসফিয়া এবং এ সময় চোখে ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হন তার বাবা মাওলানা আবু জাহের।

এর পরেরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে তাসফিয়া হত্যার ঘটনায় তার খালু হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে বাদশা ও রিমনসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় এ পর্যন্ত ৯ জন এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply