একের পর এক ফৌজদারি অপরাধ, দুর্নীতি-জালিয়াতি করেও পার পেয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে কিছু পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিভাগীয় তদন্তে অপরাধ প্রমাণের পর শাস্তির সুপারিশ করা হলেও রহস্যজনক কারণে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আর এ সুযোগে পদোন্নতি এবং পছন্দের জায়গায় বদলি হচ্ছেন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তরা। বিষয়টি চরম উদ্বেগজনক বলছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে জালিয়াতির ঘটনায় সদর দফতরের তদন্তে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করা হয় তখনকার রূপগঞ্জ থানার ওসি মাহমুদ হাসান, ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম, আসলাম হোসেনসহ ৬ এসআইর বিরুদ্ধে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে শাস্তির বদলে তাদের পছন্দের জায়গায় পোস্টিং দেয়া হয়। এর মধ্যে ইন্সপেক্টর মাহমুদ প্রথমে ডিএমপি, পরে সেখান থেকে ফেনীতে বদলি হন। তিনিসহ অন্যরা এবার ডিএমপির মতো লোভনীয় জায়গায় বদলির জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
কক্সবাজারে ১০ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে জব্দ দেখানো হয় মাত্র ১০ হাজার। বাকি ৯ লাখ ৯০ হাজার পিস বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ প্রমাণ হয় পুলিশের নিজস্ব তদন্তে। ২০১৭ সালের ওই ঘটনায় ৬ কর্মকর্তা ও তিন কনস্টেবলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও তখনকার এসপি একেএম ইকবাল হোসেন ও দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নাম মাত্র তিরস্কার করা হয়। তিরস্কৃত এসপি ইকবাল হোসেন পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি।
ঘটনা ফাঁস করেছিলেন জেলা গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা এসআই বশির আহমেদ। ব্যাগভর্তি টাকা দিয়ে তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ক্যালকুলেটর দিয়ে হিসেব করে টাকা নিতেন যিনি তিনি আজকে পদোন্নতি পেয়ে অ্যাডিশনাল ডিআইজি স্যার হয়েছেন। এতে আমি খুবই মর্মাহত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোকলেসুর রহমান যমুনা নিউজকে বলেন, এ ধরনের অপরাধের সাথে যারা যারা জড়িত সকলকেই শাস্তির আওতায় আনা উচিত। তাহলে চক্রগুলো ভেঙে যাবে। কাউকে শাস্তি দিয়ে কাউকে ছেড়ে দেয়াটা সঙ্গত নয়।
পুলিশের মতো আইন-শৃঙ্খলারক্ষী বাহিনীর জন্য বিষয়গুলো যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। বলেন, আইনের রক্ষক হয়ে যারা ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছেন তাদের সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে। তাদের কাউকে কাউকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। এটি খুবই উদ্বেগজনক। এর ফলে সাধারণ মানুষের আইনের প্রতি আস্থা আরও কমে যাবে।
ফৌজদারি অপরাধ আর জালিয়াতি করে পার পেয়ে যাওয়া এসব কর্মকর্তাদের উপযুক্ত শাস্তির পাশাপাশি তাদের সম্পদের হিসেব নেয়া দরকার বলেও মনে করেন টিআইবির এই নির্বাহী পরিচালক।
/এডব্লিউ
Leave a reply