খাগড়াছড়িতে ভবন ধসে ২ শ্রমিকের মৃত্যু, যা বলছে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি

|

স্টাফ করেসপনডেন্ট, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্মাণাধীন প্রশাসনিক ভবন ধসে দুই শ্রমিক নিহতের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন, মূলত ধসে পড়ার কারণগুলো পর্যালোচনা করে খতিয়ে দেখেন তার‍া।

এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব আশীষ কুমার সাহা, খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), আব্দুল বাতেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুজিবুল আলম উপস্থিত ছিলেন।

পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও তদন্ত কমিটির প্রধান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলাম। আমাদের কাছে মনে হয়েছে ঢালাইয়ের সময় সেন্টারিংয়ে বাঁশের খুঁটি ব্যবহার দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হতে পারে। আরও অনেক বিষয় রয়েছে, সেসব কমিটির সবার সাথে আলোচনা করে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শ্রমিকদের কাছ থেকেও একটি স্টেটমেন্ট নেয়া হবে। আমরা আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেব। এই ঘটনায় আইনগত কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তাও আমরা খতিয়ে দেখব।

অপর এক প্রশ্নে অতিরিক্ত সচিব বলেন, পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের নজরদারি জোরদার করা হবে। পরে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুর সাথে সাক্ষাৎ করেন কমিটির সদস্যরা।

গত ৮ অক্টোবর বিকেলে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্মাণাধীন প্রশাসনিক ভবনের কেন্টিলিবারের ছাদ ধসে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের কলেজ গেইট এলাকার সাজ্জাদ হোসেন এবং খুলনা বাগের হাটের মো. সাইফুল ইসলাম নামে ২ শ্রমিক মারা যান। এ ঘটনায় আহত হন আরও ৫ শ্রমিক। তারা সবাই জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।

ঘটনার পর জালাল নামে শ্রমিকদের মাঝি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ছাদ ঢালাইয়ের কাজে ২২ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। ৯০ শতাংশ ঢালাই শেষে হঠাৎ করেই তা ধসে পড়ে।

ঘটনার পর খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য কল্যাণ মিত্র বড়ুয়াকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতর (এলজিইডি) খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী এবং গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। গঠিত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা বলা হয়।

এদিকে, ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে ঠিকাদার প্রণন্ত মিত্র চৌধুরী। তিনি স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজটি করছিলেন। সংসদ সদস্যের সুপারিশে কাজটি করছিলেন বলে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে।

এদিকে, এ ঘটনার পর জেলা পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের এমন কথা চাউর হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে কাজ বাগিয়ে নেয়া হয়। পছন্দের ঠিকাদার এবং কাজগুলো আগে থেকেই ‘সিস্টেম’ করে নেয়া হয়।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply