এই রাত হতে পারতো হ্যারি কেইনের, ইংল্যান্ডের। কিন্তু পেনাল্টি কিকটি যখন তিনি উড়িয়ে মারলেন গোলবারের উপর দিয়ে, তখনই হয়তো আল বাইত স্টেডিয়ামের আকাশে উড়ে গেছে ইংলিশদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন। আরও একবার নিয়তির পরিচিত প্রদর্শনী দেখলো গ্যারেথ সাউথগেটের দল। ব্রিটিশ মিডিয়ার বিখ্যাত ‘ইটস কামিং হোম’ গানকে থামিয়ে দিয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স উঠে গেছে সেমিফাইনালে। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ মরক্কো।
মোক্ষম সময়েই পেনাল্টি পেয়েছিল ইংল্যান্ড। কেবলই অলিভিয়ের জিরুর গোলে ২-১ ব্যবধানে লিড নিয়েছে ফ্রান্স। আতোয়ান গ্রিজমানের দুর্দান্ত ক্রসে ৭৮ মিনিটে দারুণ হেডারে জিরুর লক্ষ্যভেদের মিনিট ছয়েক পরেই থিও হার্নান্দেজ ডি বক্সে পেছন থেকে ধাক্কা মারেন ম্যাসন মাউন্টকে। ভিএআরের সহায়তায় রেফারি বাজান পেনাল্টির বাঁশি। এই ম্যাচের ৫৪ মিনিটেই একবার হুগো লরিসকে পরাস্ত করেছিলেন কেইন। সেবার লরিস লাফ দিয়েছিলেন গোলরক্ষকের বাঁয়ে, আর কেইন শট নিয়েছিলেন ডানে। কেইন তার দিক এবারও অপরিবর্তিত রাখতে চাইলেন। সে কারণেই কিনা শটটি ছিল আগেরবারের চেয়ে জোরালো। কিন্তু এবার পোস্টেই বল রাখতে পারলেন না ওয়েইন রুনির সাথে যৌথভাবে ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা হ্যারি কেইন। ইংলিশ অধিনায়কের সামনে পড়ে আছে এক দীর্ঘ রাত!
ম্যাচের ৮২ মিনিটের এই ঘটনায়ই পিছিয়ে যায় ইংল্যান্ড। পেনাল্টি থেকে গোল পেলে হয়তো এ ম্যাচের স্কোরলাইন অন্যরকম হতে পারতো। এরপর, বেশ ক’বার আক্রমণের চেষ্টা চালায় দুদলই। কিন্তু, গোল আর পায়নি কেউই। তবে গোলের সুযোগ তৈরি হয়েছিল বেশ কয়েকবার। তবে, ফরাসি ডিফেন্স এ সময় আর ভেদ করতে পারেনি ইংলিশরা।
ম্যাচ শেষে পাওয়া অতিরিক্ত ৮ মিনিট ছিল সবচেয়ে বেশি উত্তেজনাকর। ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে হ্যারি ম্যাগুয়ারের সুবাদে ফ্রান্সের গোলপোস্টের একদম সামনেই ফ্রি কিক পায় ইংল্যান্ড। কিকটি নেন মার্কাস র্যাশফোর্ড। একদম গোলবার ছুঁয়ে যায় তার নেয়া ফ্রি কিকটি। এরপর নির্ধারিত হয়ে যায় ম্যাচের স্কোরলাইন। ২-১ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলো ১৯৬৬’র বিশ্বকাপজয়ীরা।
কোয়ার্টার ফাইনালের এই হাই অকটেন ম্যাচে অরেলিয়া শুয়ামেনির মহাগুরুত্বপূর্ণ গোলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১-০ গোলের অগ্রগামিতা নিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে ফ্রান্স। গোলমুখে বেশ ক’বারই আতঙ্ক ছড়িয়েছেন হ্যারি কেইন। কিন্তু এই নাম্বার নাইনের দুইটি দারুণ শট ঠেকিয়ে দেন লরিস। এছাড়া লুক শ’র আরও একটি শট প্রতিহত করে ফ্রান্সকে বিপদমুক্ত করেন এই গোলরক্ষক। অন্যদিকে, আক্রমণ, বলের দখল ও গোলমুখে শটের হিসেবেও এগিয়ে ছিল বেলিংহাম-ফোডেনরা।
তবে, মুহূর্তের এক জাদুকরী শটে ফ্রান্সকে এগিয়ে নেন অরেলিয়া শুয়ামেনি। ম্যাচের ১৭ মিনিটে বুকায়ো সাকার পা থেকে নিজেদের ডি বক্সে বলের দখল নিয়ে উপামেকানো এগিয়ে যান বামপ্রান্ত ধরে। এমবাপ্পে, ডেম্বেলে, গ্রিজমান হয়ে বল পান শুয়ামেনি। ২৫ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত এক শটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন রিয়াল মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডার।
দ্বিতীয়ার্ধের একদম শুরু থেকে আক্রমণ আর প্রতি আক্রমণে ব্যস্ত হয়ে ওঠে দু’দল। ম্যাচের ৪৬ মিনিটেই জুড বেলিংহ্যামকে নিশ্চিত একটি গোল থেকে বঞ্চিত করেন হুগো লরিস। এ আক্রমণের জবাবে ফ্রেঞ্চদের করা কাউন্টার আক্রমণ ঠেকিয়ে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। তবে দ্রুতই খেলায় ফিরে আসে ইংল্যান্ড। আর নায়ক থেকে খলনায়ক হয়ে যান অরেলিয়া শুয়ামেনি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ডি বক্সের ভেতরে সাকাকে ফাউল করে বসেন সেই শুয়ামেনি। আর তাতেই পেনাল্টি পায় ইংলিশরা। পেনাল্টি থেকে বল জালে জড়িয়ে ইংলিশদের ম্যাচে ফেরান অধিনায়ক হ্যারি কেইন। এটি ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে হ্যারি কেইনের ৫৩তম গোল। আর এ গোলের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা ওয়েইন রুনির রেকর্ড ছুঁলেন টটেনহাম হটস্পারের এই স্ট্রাইকার।
পুরো ম্যাচে কার্যকরভাবে দেখা যায়নি কিলিয়ান এমবাপ্পের ঝলক। তাকে অনেকটাই পকেটবন্দি করে রাখেন রাইট ব্যাক কাইল ওয়াকার। দারুণ খেলছেন আতোয়ান গ্রিজমান। সারা মাঠ চষে বেরিয়ে বলের জোগান নেয়া ও বন্টন করে গেছেন তিনি ফ্রি রোলে খেলে। জুড বেলিংহাম ও দেখিয়েছেন ঝলক। তবে হ্যারি ম্যাগুয়ার দেখিয়েছেন, গ্যারেথ সাউথগেট তাকে দলে নিয়ে কোনো ভুল করেননি। অবশ্য, এসবের বিচার হবে অনেক বৃহৎ সময়ের সাপেক্ষে; যেখানে কেবল লেখা থাকবে, হ্যারি কেইনের পেনাল্টি মিসে ইংল্যান্ডের বিদায়। আর, শেষ চারে উঠে গেছে জিরু-এমবাপ্পেদের ফ্রান্স।
আরও পড়ুন: প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে সেমিতে মরক্কো; রোনালদোদের বিদায়
/এম ই
Leave a reply