শাকিল হাসান:
দেখতে দেখতে সময় ঘনিয়ে এলো। বহুল কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেল উদ্বোধন এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। মেগা এই প্রকল্পের দৈর্ঘ্য বেড়েছে। বেড়েছে খরচও। তবে, এটি চালু হলে সড়কে জনভোগান্তি কমবে অনেকখানি, এমনটাই মনে করছেন নগরবাসী।
ঢাকার যানজট নিরসনে ২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প নেয়া হয়। পরিকল্পনা ছিল, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে বিশ কিলোমিটারের এমআরটি-ছয়। মূল অবকাঠামোর নির্মাণ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি নির্মাণ শেষের লক্ষ্য থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল বেশ কয়েকবার। কিন্তু করোনা সেই লক্ষ্য পূরণ করতে দেয়নি। তারপরও এক বছর আগেই অর্ধেক অংশ চালু হচ্ছে। এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এমআরটি-ছয় বাড়ানো হয় কমলাপুর পর্যন্ত। বাড়ে প্রকল্পের মেয়াদও।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ২০২২ এর শেষে এসে আমরা মেট্রোরেল চালু করে দিচ্ছি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মতিঝিল এবং ২০২৫ সালের জুনে কমলাপুর পর্যন্ত চালু হবে মেট্রো। ২০২৪ সালে এটি চালুর কথা ছিল। কোভিডের কারণে সময় লাগছে।
বাড়তি এ অংশ নির্মাণে খরচ বাড়ছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রায় ছয় একর জমি নুতন করে অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনে ১ হাজার ১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বাকি অর্থ খরচ হবে অবকাঠামো নির্মাণে। পাশাপাশি তিনটি স্টেশন প্লাজার জন্য সোয়া ছয় হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ৩ হাজার ৩০ কোটি টাকা এবং তিনটি স্টেশন প্লাজা নির্মাণে ৯৩ কোটি টাকা, ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট নির্মাণে ৮৬৬ কোটি, স্টেশনে উঠা-নামার সিড়ির জন্য জমি অধিগ্রহণ, ভ্যাটসহ মোট বাড়তি টাকার অংক ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত এমআরটি ছয়ের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে সাড়ে তেত্রিশ হাজার কোটি টাকা।
পরিকল্পনাহীনতাই এই বাড়তি খরচের কারণ বলে মনে করেন যোগযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সামছুল হক। বলছিলেন, কেন বড় বিনিয়োগ করে বিলাসী প্রকল্প করবো? পরবর্তীতে ভাড়া বাড়িয়ে জনগণকে উন্নয়ন যন্ত্রণা ভোগার পর আশা জাগানিয়া প্রকল্পে খরচের আরেক যন্ত্রণার মধ্যে ফেলবো। এটা কিন্তু একবার করা যেতে পারে। এর পারফরমেন্সের ওপর বাকি সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
প্রকল্পের সার্বিক ব্যয় মেটাতে জাইকার ঋণ ১৯ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। বাকি ১৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে সরকার।
মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বলা হলেও আঁকাবাঁকা রুট ও ঘনঘন স্টেশনের কারণে এই সর্বোচ্চ গতি নিয়ে প্রশ্ন আছে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, যদি সর্বোচ্চ গতি তোলা না-ই যায়, তাহলে ভারি স্ট্রাকচার তৈরি করে বিনিয়োগ কেনো বাড়ানো হলো?
/এমএন
Leave a reply